স্মার্ট জাতি ও দেশ গঠনে খাদ্যে নিরাপত্তা ফেরাতে এবং নিরাপদ খাদ্য সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটা যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বলেন, ‘আমাদের নিজেদের সদিচ্ছা যদি না থাকে, আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে স্মার্ট জাতি গড়া সম্ভব না।‘
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরাপদ খাদ্যের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এসব বলেন। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহদাত হোসেন সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে স্মার্ট জাতি গড়ে তোলা দরকার। আজকে যে শিশুটির জন্ম হয়েছে সেই শিশুটিকে যদি আমরা জন্মের পর থেকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে না পারি তাহলে কিন্তু স্মার্ট জাতি গঠন সম্ভব না। শিশুটিকে কীভাবে শারীরিকভাবে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে সেটি তার মাকে জানতে হবে।’
নিজের ঘর থেকে স্মার্ট জাতি গঠনের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ঘরের মায়েরা স্মার্ট হলে আমরা আস্তে আস্তে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যেতে পারবো। আমাদের শিশুদের জন্ম হলে আমরা যদি মায়ের দুধ খাওয়াই তাহলে কিন্তু সন্তানেরা বেশি শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হবে। বর্তমানে শিশুদের কিন্তু আমরা মায়ের দুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করছি। জন্মের পর থেকে আমরা শিশুদের বাইরের নানান রকমের খাবার খাওয়াতে শুরু করি। এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের জাতিকে নষ্ট করার কাজ।’
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিরাপদ খাদ্যের কথা বলেছেন। সেটা সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। ভ্যেজাকারীদের বিরুদ্ধে তিনি স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টও তৈরি করেছেন। আর যারা মজুদ করবেন তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখেও কিন্তু তিনি আইন করেছেন। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতার স্বপরিবারে হত্যার পরেই সব আইনের ছন্দপতন হলো। এই ছন্দপতনের পরে পুষ্টিকর খাবার তো দূরে থাক তখন তিন বেলা ভাত খাবার পরিস্থিতি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ছিল না।’, বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা খারাপ দিকে নিজেদের ক্ষতি করার জন্য যতটা স্মার্ট, ভালো দিকে কিন্তু আমরা ততোটা স্মার্ট না। অতএব ভালো দিকে আমাদের স্মার্টনেস বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের নাগরিক স্মার্ট হবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের নিরাপদ খাবার খেতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র ১৪ জন কর্মকর্তা নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করে। এখন প্রতিটা জেলায় খাদ্য কর্তৃপক্ষের টিম রয়েছে। তারা নিয়মিত খাদ্যের ভ্যাজাল রোধে কাজ করছে। বর্তমানে আগের থেকে অনেক বেশি খাদ্য নিরাপত্তা বেড়েছে। আমাদের নিজেদের সদিচ্ছা যদি না থাকে আমরা যদি সচেতন না হয় তাহলে নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে স্মার্ট জাতি গঠন সম্ভব না। স্মার্ট জাতি ও দেশ গঠনে খাদ্যে নিরাপত্তা ফেরাতে এবং নিরাপদ খাদ্য সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে আরেকটা স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।‘
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। কিন্তু সঠিক পুষ্টির বিষয়ে সঠিক ধারনা নেই। আমরা পুষ্টি জ্ঞানে পিছিয়ে আছি। সুষম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ না করে আমরা প্রায় অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে থাকি। আমরা সবজি উৎপাদনে এগিয়ে আছি। কিন্তু সবজি খেতে চাই না। সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে মানুষের গড় আয়ু বাড়ে।’
‘আগে আমরা দেখেছি বিভিন্ন রকমের অসাধু কর্মকর্তদের খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের প্রচুর ক্ষতি হতো। আমরা কিছু মানুষ দেখতাম যাদের শরীরে হাড় বাদে কোনো মাংস ছিল না। তখন মানুষের গড় আয়ু ছিল কম। কিন্তু বাংলাদেশের আগের থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষের গড় আয়ু ও বেড়েছে।’ বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীতে যে পরিমান মানুষ খাবার না খেয়ে মারা যায় তার থেকে অধিক মানুষ খাবার খেয়ে মারা যায়। এর প্রধান কারণ অনিরাপদ খাদ্য। অপরিকল্পিত অনিরাপদ খাদ্য প্রতিনিয়ত আমাদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে, আর আমরা সেটা দেখছি। আমরা যদি একটু সচেতন হতে পারি এবং আমাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারি তাহলে আমরা নিরাপদ খাবার খেতে পারি।‘
পরিমিত খাবার না খেয়ে তার অধিক পরিমান খাদ্য গ্রহণে শরীরে ক্ষতির পরিমান বেড়ে যায় বলেও জানান খাদ্য সচিব। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত খাবার শরীরকে শক্তি না দিয়ে বার্ডেম দেয়। নিরাপদ খাদ্যের সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করা আমাদের প্রধান কাজ হতে হবে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে নিরাপদ খাদ্যের কোনো তুলনা নেই।’
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি ভালো নাগরিক গড়ে তুলতে চাই তাহলে নিরাপদ খাবার লাগবে। যদি খাবারে নিরাপত্তা না থাকে তাহলে একজন মানুষ সুস্থ থাকতে পারবে না। আর একজন নাগরিক যদি সুস্থ না থাকে তাহলে দেশ ও জাতি গঠনে তিনি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন না। সুতরাং সুস্থ সবল সুনাগরিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নিরাপদ খাদ্যের ভূমিকা অপরিসীম।‘
মহাপরিচালক বলেন, আমরা যেন নিজেরা নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করি এবং আমাদের আশে পাশে যারা আছেন তাদেরও যেন আমরা নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২০:১০ ৪১ বার পঠিত