গোটা বিশ্বে শবে কদর কি দুই রাতে হয়?

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » গোটা বিশ্বে শবে কদর কি দুই রাতে হয়?
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫



গোটা বিশ্বে শবে কদর কি দুই রাতে হয়?

অনেকের প্রশ্ন লাইলাতুল কদর তো একটি। তাই গোটা পৃথিবীতে লাইলাতুল কদর এক রাতেই হবে। দুই রাতে নয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সৌদি আরবে এক রাতে লাইলাতুল কদর পালন করা হয়, অপর দিকে বাংলাদেশে অন্য রাতে পালন করা হয়। কারণ সৌদি আরবে যে রাত্রে লাইলাতুল কদর হয়ে থাকে বাংলাদেশে তো ঐ সময় জোড়-রাত থাকে। তাহলে কি লাইলাতুল কদর দুই রাতে হয়?

এমন প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমরা আজকে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। প্রথমে আমরা জানবো- কোরআন এবং হাদিসে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কী বলা হয়েছে? আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদর সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন, তাতে ইরশাদ করেন-

লাইলাতুল কদরে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। ঐ রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিময় সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। (সুরা কদর দ্রষ্টব্য)

হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে,

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আমাকে স্বপ্নে লাইলাতুল কাদর অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাতে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮১৩)

অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আম্মাজান হযরত আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর। (বুখারি: ২০১৭)

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা।

কুরআনে এবং হাদিসের উপর স্বাভাবিক ভাবে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখি যে, লাইলাতুল কদর একটি এবং তা বেজোড় রাতে হয়ে থাকে। যে রাত্রিতে কোরআন শরীফ অবতীর্ণ করা হয়েছে, সেই রাত্রে আল্লাহর রহমত বিশেষভাবে মুতাওয়াজ্জু হয়, ফিরিস্তাগণ অবতীর্ণ হন এবং সকাল পর্যন্ত শান্তি বর্ষিত হতে থাকে।

লাইলাতুল কদরের বিষয়টি বর্তমানে বাস্তবতার সাথে মিলছে না। আর এই না মিলার কারণে-ই আমাদের প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। সুতরাং এখানে একটু বিশ্লেষণমূলক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে বিষয়টি সকলের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। আর কোন সন্দেহ সংশয় থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

(এক) আপনি লক্ষ্য করে দেখেন তো, সমগ্র পৃথিবীতে একসাথে রাত থাকে কি না?

তো আপনি বলবেন, না। সমগ্র পৃথিবীতে একসাথে রাত থাকে না। তাহলে এবার আপনি বলুন, লাইলাতুল কদর সমগ্র পৃথিবীতে একসাথে কিভাবে হবে? তাহলে পরিষ্কার হয়ে গেল সমগ্র পৃথিবীতে লাইলাতুল কদর একসাথে হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ কিভাবে লাইলাতুল কদর পাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলবো- আগে আমাদেরকে এক জায়গা থেকে লাইলাতুল কদরের সূচনা ধরতে হবে?

এখন তা কোন জায়গা থেকে হবে? যে সন্ধ্যা থেকে চাঁদ দৃষ্টিগোচরের মাধ্যমে রমজান মাসের সূচনা হয়েছিল, সেখান থেকেই লাইলাতুল কদরের সূচনা হবে। যেখান থেকে রমজানের ১ তারিখের সূচনা হয়েছিল, সেখান থেকেই লাইলাতুল কদরের সূচনা হবে।

আর সেখান থেকে লাইলাতুল কদর তার পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকবে,ওই মুহূর্তে তার পূর্ব দিকে লাইলাতুল কদর হবে না; বরং পশ্চিম দিক থেকে ঘুরতে ঘুরতে ২৩ ঘন্টা পর সেখানে লাইলাতুল কদর উপস্থিত হবে, ইনশাআল্লাহ। (যদি চাঁদ সৌদির পর সকল দেশসমূহে ধারাবাহিকভাবে দেখা গিয়ে থাকে তাহলে) যেমন, সৌর তারিখের বেলায় ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা থেকে তারিখ গণনা শুরু করা হয়। সুতরাং এভাবেই সমগ্র পৃথিবীর মানুষ লাইলাতুল কদর পেয়ে যাবে।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আমাদের এই লেখা পড়ে কেউ হাসবে, কেউ ব্যঙ্গ করবে, তবে আপনি জেনে রাখুন যে-সূর্য ও চন্দ্রের ন্যায় দিন এবং রাতও পশ্চিম দিকে ঘুরতে থাকে। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- আর আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সুরা আম্বিয়া আয়াত নং ৩৩)

তাহলে বুঝা গেল লাইলাতুল কদর বিচরণ করবে।আর এভাবেই সমগ্র পৃথিবীতে উপস্থিত হবে। তো এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, লাইলাতুল কদর দুই রাতে নয় ; বরং এক রাতেই হচ্ছে।

তাহলে লাইলাতুল কদর দুই রাত্রে হয় এমনটি মনে হয় কেন? তার উত্তর হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের দিন-রাত, মাস ও বছরের হিসাবের জন্য দুটি হিসাব দান করেছেন। একটি হচ্ছে চন্দ্রের হিসাব আরেকটি হচ্ছে সৌর হিসাব। শবে কদর চন্দ্রের হিসেবের সাথে সম্পৃক্ত।

বর্তমানে কিছু ভাই চন্দ্রের হিসাবের তারিখকে সৌর হিসাবের তারিখের সাথে মিলিয়ে ফেলছেন। যার কারণে তারা দেখতে পাচ্ছেন সারা পৃথিবীতে দু রাতে শবে কদর হচ্ছে। অথচ তা দু রাতে নয়; বরং এক রাতেই হচ্ছে।

কেননা, শবে কদরের সম্পর্ক সৌর হিসাবের সাথে নয় এবং কোন নির্দিষ্ট কোন বারের সাথেও নয়। আর সৌর তারিখ এবং বার আন্তর্জাতিক তারিখ রেখায় এসে এ পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে মনে হয় শবে কদর দু রাত্রিতে হচ্ছে। এটাই মূল দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণ। সুতরাং আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার মাধ্যমে চন্দ্র মাসের তারিখ পরিবর্তন হবে না । চন্দ্র মাসের তারিখ যেখান থেকে সূচনা হয়েছিল সেখানেই এসে পরিবর্তন হবে। তাহলে আর কোন অসুবিধা এবং সংশয় থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

পক্ষান্তরে যারা এই দুই হিসাবের মাঝে পার্থক্য করেন না তাদের কাছে বিষয়টি কিছুতেই স্পষ্ট হবে না। আরো কিছু কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর। আমাদের লিখা পাঠ করার পর কেউ বলবে- তাহলে কি আল্লাহ তায়ালা সারা পৃথিবীতে শেষ রাত্রে এভাবে ঘুরতে থাকবেন?

কেউ বলবে- তাহলে কি ফেরেশতারা লাইলাতুল কদরে সারা পৃথিবীতে এভাবে ঘুরতে থাকবে? এসব কথার উত্তর হিসেবে আমরা বলবো- শেষ রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে আগমন করার বিষয়টি যেভাবে আমাদের বুঝ-বুদ্ধির অনেক ঊর্ধ্বে। এটা শুধুই বিশ্বাস করে মেনে নেয়ার জিনিস।

মানব মস্তিষ্কের এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে হিসাব-ক্যালকুলেশন এবং অনুধাবন সম্ভব নয়। ঠিক তদ্রুপ লাইলাতুল কদরে আল্লাহ তাআলার রহমত নাযিল ও ফেরেশতাদের আগমনের বিষয়গুলো একইভাবে বিশ্বাস করে মেনে নেয়ার জিনিস। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করেন। সকল প্রকারের ভুল-ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন আমিন।

লেখক: শিক্ষক: লালবাগ মাদ্রাসা, ঢাকা, খতিব: আজিমপুর ছাপড়া জামে মসজিদ, ঢাকা খাদেম: দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৬:৪৫   ২ বার পঠিত  




ছবি গ্যালারি’র আরও খবর


দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কারও হস্তক্ষেপ কাম্য নয়: সারজিস
বিআইএম ট্রেনিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন করলেন শহীদ ফাইয়াজের মা
ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রস্তাব দিল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
কার্গো টার্মিনালে আন্তর্জাতিক বন্দরে রূপ পেল বেনাপোল
ঈদ বকশিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া নিলেই ব্যবস্থা: সাইফুল আলম



আর্কাইভ