রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল নিয়ে দেয়া ‘মানহানিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ডা. সংযুক্তা সাহাকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। ভুল চিকিৎসার জন্য এক নবজাতক ও তার মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেছিলেন তিনি।
বুধবার (২১ জুন) হাসপাতালের পক্ষে ডা. সংযুক্তা সাহার বাসার ঠিকানায় লিগ্যাল নোটিশটি পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মো. মাজহারুল ইসলাম।
নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে ডা. সংযুক্তা বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে নোটিশে।
এর আগে, মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানীর পরীবাগে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংযুক্তা সাহা। তিনি দাবি করেন, রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ভুল করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু দোষ দেয়া হয়েছে তাকে।
এছাড়া মাহবুবা রহমান আঁখির (নবজাতকের মা) ভর্তির সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো লিখিত বা মৌখিক অনুমতি নেয়নি বলে দাবি করেছেন ডা. সংযুক্তা।
তিনি বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালকে চ্যালেঞ্জ করছি, তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে আমার নামে। আমি সেখানকার কর্মী। ভুল করেছে হাসপাতাল; কিন্তু দোষ দিয়েছে আমাকে। যে কারণে মামলায় আমার নাম নেই। অথচ মিথ্যা তথ্যের কারণে আমি আজ হেনস্থার শিকার। আর আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না।’
এর আগে, নবজাতক ও মা মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেন হাসপাতালের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম। সোমবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে নবজাতক ও মা আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের। কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি। আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা মাহমুদা রহমান আঁখি রোববার (১৮ জুন) দুপুর ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ৯ জুন প্রসব ব্যথা শুরু হলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে আঁখিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই সময় ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। একপর্যায়ে আঁখি সেন্সলেস হয়ে যান। এমন অবস্থায় ডেলিভারি করলে হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় নবজাতক। এরপর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা জানান, আঁখির শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না। এর মধ্যে ব্রেন স্ট্রোক করেন তিনি, রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না। সেন্ট্রাল হাসপাতালের এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বুধবার (১৪ জুন) ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত তদন্ত টিম গত শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫২:২৬ ৪৭ বার পঠিত