দখল-দূষণে রাজধানীর মৃতপ্রায় খালগুলো কি পুনরুদ্ধার হবে?

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » দখল-দূষণে রাজধানীর মৃতপ্রায় খালগুলো কি পুনরুদ্ধার হবে?
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫



দখল-দূষণে রাজধানীর মৃতপ্রায় খালগুলো কি পুনরুদ্ধার হবে?

ঢাকার বুকে এক সময় বয়ে যেত শতাধিক খাল। প্রবাহিত হত স্বচ্ছ পানি, সবুজের ছোঁয়া। আর নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সেই খালগুলো ছিল ঢাকার প্রাণ। তবে দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারিয়েছে বেশিরভাগই। বাকিগুলো এখন মশার উপদ্রব আর পরিবেশ বিপর্যয়ের কেন্দ্র। তবে বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নগরবাসীর আশা, অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ কর্মসূচির আওতায় ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার হবে।

এক সময় শতাধিক খাল দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ছিল রাজধানী ঢাকা। এসব খাল বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক সময়ের প্রবাহমান পানিপথগুলো আজ বিলীন প্রায়। কল্যাণপুর ও ধোলাই খালের মতো অসংখ্য খাল কংক্রিটের ভারে চেপে সরু হয়ে এখন ড্রেনে রূপ নিয়েছে। খাল ভরাট করে তৈরি হয়েছে ভবন, রাস্তা, ব্রিজ ও ড্রেন—আর এর ফলাফল হলো ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয়।

বর্তমানে ঢাকার খালের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, ৪৭টি খাল আছে। কিন্তু রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৫৬, যার সবই মৃতপ্রায়। আর যা বেঁচে আছে তার পাশেই বসবাস করছেন হাজারো মানুষ। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খালগুলোর সাহায্য করার কথা থাকলেও নিয়মিত দূষণে ভরাট হয়েছে চারপাশ। বর্ষাকাল হলেই দূষিত পানি উপচে ঢুকে পরে বাসাবাড়িতে। ময়লার কারণে তৈরি হয় মশা মাছির আস্তানা। সব মিলেয়ে দীর্ঘ দিনের দুর্দশা কাটছে না খালপাড়ের বাসিন্দাদের।

তারা বলছেন, বর্ষা হলেই ঘরে রাস্তা ডুবে যায়, ঘরে পানি ঢুকে। তখন চলাফেরা বা বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।

২০২০ সালে ওয়াসার কাছ থেকে খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় সিটি করপোরেশন। তৎকালীন দুই সিটির মেয়রও নিয়েছিলেন মহাপরিকল্পনা। নিয়মিতই আয়োজন করা হতো খাল পরিষ্কার কর্মসূচির। তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় খালগুলো ফিরে পায়নি প্রাণ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহম্মদ খান সময় সংবাদকে বলেন,

সরকারি প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন খালের উপর দিয়ে রাস্তাও করেছে। এমন রাষ্ট্রীয় চরিত্রের কারণে খালগুলো ধ্বংস হয়েছে। এখন ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ পুনরুজ্জীবিত করতে গেলে দখলদারদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা না করলে দেখা যাবে, কিছুটা উদ্ধার করার পর পরবর্তীকালে দখলদাররা আবার ভিন্ন চরিত্রে ভিন্ন নামে এমনকি রাজনৈতিক চরিত্রের বদল ঘটিয়ে আবার তারা ফেরত আসবে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ভূমি সংকটের কারণে খাল দখল ও ভরাটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খাল নিয়ে নতুন আশার আলো দেখছেন নগরবাসী। এবার কোনো প্রকল্প নয়, খাল নিয়ে এসেছে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ নামে নতুন কর্মসূচি। গত ২ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের বাউনিয়া খাল সংস্কারের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির সূচনা হয়। ঢাকার ১৯টি খাল একসঙ্গে যুক্ত হয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা ও পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খালের পাড়ে গাছ লাগালে সেই গাছ বড় হয়ে সবুজ দেখতে সময় লেগে যাবে। কিন্তু আমরা পরিকল্পনাটা এমনভাবে করবো, যাতে পরবর্তীকালে যে সরকার আসে, তারা যেন সেই কাজটা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।’

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. এজাজ বলেন,

ঢাকা শহরটাই সুয়েরেজ লাইন। তাই এটা রূপান্তর করতে হবে। ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’র মাধ্যমে আপাতত জলাবদ্ধতা দূর হবে। খালের পাড়ের অনেক জায়গা আছে, সেগুলো দখলমুক্ত রাখতে খালপাড়ের লোকজনকে দিয়ে কৃষি কাজ করাবো।

ভোগান্তি থেকে ঢাকার খালগুলোকে প্রশান্তির স্থানে পরিণত করতে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের সচেতন প্রচেষ্টা।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৯:৪৪   ১ বার পঠিত  




ছবি গ্যালারি’র আরও খবর


৭ ঘণ্টা পর বনানীর সড়ক ছাড়লেন পোশাক শ্রমিকরা
এবার টেলিভিশনে দেখা যাবে ‘দরদ’
প্রশাসন ঠিক থাকলে দেশে এমন বিশৃঙ্খলা হতো না : রিজভী
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আগুন, পৌনে এক ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
এমবাপ্পে-ভিনির গোলে বার্সার পাশে রিয়াল



আর্কাইভ