ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫



ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল এন্ড ডিপ্লোম্যাসির আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ড. আবদুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে “ট্রাম্প ২.০: হোয়াট ইট মিনস্ ফর সাউথ এশিয়া?” শীর্ষক পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কূটনীতিক, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে মতবিনিময় করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলে যে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে, তা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল এন্ড ডিপ্লোম্যাসির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল এন্ড ডিপ্লোম্যাসির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহীন উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, বৈশ্বিক বিষয়ে অর্থবহ আলোচনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ব নেতৃত্বের পরিবর্তনশীল গতিপ্রবাহের মধ্যে টিকে থাকতে হলে আগেভাগেই সুপরিকল্পিত নীতি নির্ধারণ করা জরুরি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতাউর রহমান তালুকদার। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, আইবিএ’র অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ওমর নাসিফ আবদুল্লাহ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার জাহিদুল ইসলাম মিয়াজি, বানিয়াস হারবারের সিইও সাদমান বিন কবির, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা জয়নুল ইসলাম এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাকিব সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তনে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ

মূল প্রবন্ধে আতাউর রহমান তালুকদার বলেন, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়তে পারে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। পাকিস্তান খুব বেশি লাভবান হবে না। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকাতে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে পারে।

সাকিব আলী বলেন, ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সীমিত রাখতে চান। তার মেয়াদে যুদ্ধের সম্ভাবনা কম থাকতে পারে, তবে বাণিজ্যনীতির কঠোরতা বাড়বে, যা বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি সুরক্ষাবাদী (protectionist), যা চীনের ওপর কঠোর অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের উচিত আমদানি বৈচিত্র্যময় করা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া।

ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও গণমাধ্যমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশের কৌশলগত করণীয়

ওমর নাসিফ আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ কি আদৌ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক প্রভাব খাটাতে পারে? তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ এই খাতসহ তরুণ প্রজন্মের পশ্চিমা ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহকে কূটনৈতিক আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

সাকিব সরকার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল সংকোচন অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি অনিশ্চিত হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা জয়নুল ইসলাম বলেন, ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অনিশ্চিত ভূমিকার কারণে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পরিকল্পনা করতে হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহিদুল ইসলাম মিয়াজি বলেন, ট্রাম্পের ‘গ্রিনল্যান্ড কেনার’ মতো বিতর্কিত বক্তব্য বিশ্বব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের উচিত ওয়াশিংটনে একটি সক্রিয় লবিং টিম গঠন করা এবং মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা।

উদ্যোক্তা সাদমান বিন কবির বলেন, বাংলাদেশকে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সরাসরি কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়িয়ে নিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন, বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে, তবে শিল্পখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সম্ভব।

নীতিনির্ধারকদের জন্য সুপারিশ

আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, দক্ষিণ এশিয়াকে নতুন বৈশ্বিক বাস্তবতায় খাপ খাইয়ে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুযোগ কাজে লাগানো যায় এবং ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়।

এ সংলাপ থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো একটি নীতিনির্ধারণী প্রতিবেদনে সংকলিত হবে, যা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক, গবেষক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩১:৫৫   ৮ বার পঠিত  




ছবি গ্যালারি’র আরও খবর


সরকার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় - ধর্ম উপদেষ্টা
নৈতিকতাবিহীন নেতৃত্ব তৈরি হলে সম্পদের সুষম বণ্টন হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা
অনেক নৃগোষ্ঠী ভাষা বিলুপ্তি ঝুঁকিতে
কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুড়েছে ৬১টি ঘর
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশের সুরক্ষা করতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা



আর্কাইভ