
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পুলিশ ভেরিফিকেশন আর লাগবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেইসঙ্গে সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন।
গত বছরের মতো এবারও রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনকে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু করা হয়েছে। তিন দিনের এই সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
নতুন পাসপোর্টের আবেদনকারীদের তিন চতুর্থাংশকেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ‘ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভূত টাকা’ দিতে হয় বলে অভিযোগ বেশ পুরনো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পাসপোর্ট তো নাগরিক অধিকার, একটি নাগরিক পরিচয়পত্র। এখন আইন করে দিয়েছি পাসপোর্ট করতে পুলিশের ভেরিফিকেশন লাগবে না। এগুলো লাগে না। এগুলো হয়রানি। এই হয়রানির ভূমিকা উল্টে দিতে হবে।’
জেলা প্রশাসকদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওপরই এখন সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের রক্ষা সরকারের গুরু দায়িত্ব।’
অন্যের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজ বিবেচনায় কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে এই সুযোগটি পূর্ণ মাত্রায় আছে। পুরো দেশকে একটি টিম হিসেবে বিবেচনা করে কাজ করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের মুক্ত আলোচনা হবে। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। রাতে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ জানান, ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৪টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এছাড়া এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে পাওয়া এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সচিব জানান, যেসব প্রস্তাব পাওয়া গেছে, এর মধ্যে জনসেবা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইন কানুন বা বিধিমালা সংশোধন জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশি সংখ্যক প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট ২৮টি।
সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪২:১৩ ৮ বার পঠিত