ভারতীয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। মৃত্যুর পরেও যার রূপ, গুণ-অভিনয়ের প্রশংসায় মেতে ওঠেন সিনেমাপ্রেমীরা। তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, রসবোধ সবকিছুই অন্যদের থেকে আলাদা। হবেই বা না কেন? তিনি যে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক নায়িকা ছিলেন তিনি।
সেই অভিনেত্রীকে হারানোর ১১ বছর হলো আজ (১৭ জানুয়ারি)। ৮২ বছর বয়সে আজকের দিনেই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সুচিত্রা সেন।
মূলত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সুচিত্রা সেন।
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় সুচিত্রা সেনের। যদিও মুক্তি পায়নি সিনেমাটি। ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর জন্য রোপ্য পুরস্কার পান তিনি। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে ভারত সরকার।
শোনা যায়, ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল সুচিত্রা সেনের কাছে। কিন্তু জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেননি তিনি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয় অভিনেত্রীকে।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার সদরে জন্ম নেন তিনি। ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী) গ্রাম সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক নিবাস। পরিবার থেকে অভিনেত্রীর নাম রাখা হয়েছিলো রমা দাশগুপ্ত।
সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত এবং মা ইন্দিরা দেবী। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনি। পাবনা শহরেই পড়াশোনা করেছিলেন সুচিত্রা সেন।
১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সংসার পাতেন সুচিত্রা সেন। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। ১৯৫৫ সালে ‘দেবদাস’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুচিত্রা সেন।
স্বামী মারা যাওয়ার পরও অভিনয় চালিয়ে গেছেন তিনি। যেমন তার হিন্দি সিনেমা ‘আন্ধি’। এই চলচ্চিত্রে একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে ফিল্মফেয়ারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর চলচ্চিত্র থেকে অবসর গ্রহণ করেন সুচিত্রা সেন। এরপর তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। ২০১৪ সালে কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অভিনেত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০০:২৭ ১ বার পঠিত