জেলা সদর ভোলার ইলিশ বাড়ি এখন পর্যটকদের মিলনমেলায় রুপ নিয়েছে। নামটি শুনে কিছুটা অবাক হলেও এটি এখন সবার প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
এলাকাটির একদিকে মেঘনা অন্যদিকে সবুজ বন, মাঝখানে রং বেরংয়ের কুঁড়েঘর আর বাহারী কিসিমের ফলফলাদি গাছের হৃদয় নিংড়ানো সূদৃশ্য যেনো ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এখানকার প্রকৃতির নির্মল বাতাসে বসে প্রশান্তির ছোঁয়ায় মন জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের।
এটি গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলার পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছে। সূত্রমতে, ২০২২ সালের ১০ জুলাই উদ্বোধনের থেকে তেমন সাড়া না জাগলেও ধীরেধীরে এখন এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এখন ব্যাপকতা লাভ করেছে। যা এখন প্রতিদিনই নজর কাড়ছে পর্যটকদের।
দূর-দূরান্ত থেকে ইলিশ বাড়িতে ছুটে আসছেন মানুষ। বিশেষ করে শীতের আগমনী বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে যেন ঢল নেমেছে পর্যটকদের।
সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পটটি জেলার পর্যটন শিল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ইলিশের জন্য বিখ্যাত দ্বীপজেলা ভোলা। এটি সবার জানা থাকলেও ইলিশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভোলায় কোনো স্থাপনার নাম নেই। তাই একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা ইলিশের সঙ্গে ভোলাকে আরও বেশি পরিচিত করে তুলতে মেঘনার তীর ঘেঁষে গড়ে তুলেছেন ইলিশ বাড়ি নামের একটি পর্যটন কেন্দ্র। ঈদের দিন ২০২২সালের ১০ জুলাই থেকে এটি চালু হওয়ার পর এটির সুনামখ্যাতি সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এতেই ব্যাপক সাড়া পড়েছে দর্শনার্থীদের। ইলিশ বাড়ি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। এখানে এসেই মুগ্ধ তারা।
এখানে ঘুরতে আসা খুলনার পর্যটক আতাউর রহমান ঢালির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, ভোলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মত এটিও অনেক সুন্দর। কিন্তু কিছুটা আলাদা। এক স্থানে বসেই সব কিছুর দেখা মিলবে। বরিশাল থেকে এখানে স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা দর্শণার্থী গৃহিনী আয়শা বেগম বলেন,সু-বিশাল মেঘনা নদীর পাড়ে এতো সুন্দর ও মনোরম দৃশ্যময় পর্যটন স্পট দক্ষিণ জনপদে খুবই বিরল।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানকালে জানা যায়, ৫ একর জমির ওপর সম্পূর্ণ কাঠ ও গাছগাছালী দিয়ে মেঘনার বুকে নির্মাণ করা এ পর্যটন কেন্দ্রটি। যা এখন সবার নজর কেড়েছে। বেশ কয়েকটি কুঁড়েঘর নির্মাণ করা হয়েছে, বাহারি লাভ পয়েন্ট চারপাশের আলোকসজ্জা আর খুব কাছ থেকে প্রকৃতি দেখা সুযোগ রয়েছে এখানে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য ছাড়াও জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য, নদীর উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস আর অপরূপ প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে এখানে বসেই।
ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানালেন, এখানে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখার পাশাপাশি তাজা ইলিশের স্বাদ নেওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি খাবারও।
ইলিশ বাড়ির উদ্যোক্তা এম হেলাল উদ্দিন কে বলেন, ইলিশ বাড়ি চালু হওয়ার পর থেকে আমরা পর্যটকদের অনেক সাড়া পাচ্ছি। এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চাইলেন তিনি।
এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ইলিশবাড়িসহ জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জেরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রয়েছে পুলিশের নজরদারি।
ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক কে বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।
ইলিশ বাড়ির উদ্যোক্তারা জানালেন, শুধু সৌন্দর্য উপভোগ নয়, একই সঙ্গে তাজা ইলিশ ফ্রাইসহ দেশি-বিদেশি নানা খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে পর্যটকদের জন্য।
জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র গুলোর পাশাপাশি দর্শণীয় স্থান ইলিশ বাড়ি পর্যটকদের জন্য বাড়তি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন এ শিল্পে সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৭:৫৬ ২ বার পঠিত