জীবনের পাতা থেকে ঝরে গেলো আরো একটি বছর। প্রতিটি বছর গেলেই আমরা মৃত্যুর আরো কাছাকাছি হই। শুরু হয় নতুন বছর। নতুন বছরে মানুষ আনন্দিত হয়। আবার অনুশোচনা ও দুঃখে ভারাক্রান্তও হয়। নতুন বছর আগমনে যেমন খুশি ও আনন্দ বিরাজ করে। তেমনি জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাওয়ার বেদনাও মিশে থাকে। জীবনের একটি প্রান্তের শেষ নিঃশ্বাস শেষ হয়। বছরের গ্লানি মুছে মানুষ নতুন করে যেনো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে এ প্রত্যাশাই থাকে মহান রবের। আমাদেরও নতুন বছরে আল্লাহর বিধানগুলো আরও সঠিকভাবে পালনের প্রতি যত্নবান হই।
রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’ (তিরমিজি ২৪৫৯)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম বলেন, আল্লাহর রসুল সা.-এর সাহাবিরা নতুন বছরের আগমনে কিংবা নতুন মাসের শুরুতে এই দোয়া পড়তে অভ্যস্ত ছিলেন। দোয়াটি হলো- اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ، وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। (আল-মুজাম আল-আওসাত, হাদিস ০৬/২২১)
আরেকটি বর্ণনায় কিছুটা ভিন্নতায় এসেছে। সেখানে দোয়ার শেষের দুই অংশ আগে-পরে বর্ণিত হয়েছে। তখন দোয়াটি এভাবে হয়, اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। (মুজামুস সাহাবাহ ০৩/৫৪৩; আল-ইসাবাহ ০৬/৪০৭-৪০৮)
নতুন বছর বা নওরোজ উদযাপন বলতে ইসলামের কোনো বিধান নেই। পটকা ফোটানো, ফানুস উড়ানো, হৈ-হুল্লোড় ইত্যাদি অমুসলিমদের সংস্কৃতি। ইসলামে এসবের অনুমোদন নেই। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবুদাউদ, মেশকাত: ৪৩৪৭)
নববর্ষ মানুষকে ভাবতে শেখায়। নতুন করে মহান রবের অনুগত্যে আহ্বান করে। বছরের প্রথম দিনে ব্যক্তি পুরনো বছরের আত্মপর্যালোচনা করে। নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজায়। আর নবোদ্যমে কর্মতৎপর হয়ে ওঠে।
প্রতিটি মানুষের উচিত নবী-জীবনের আদর্শ অনুসরণের জন্য কোরআন-হাদিসের পথ অনুসরণ করা। নতুন বছরে তওবা করে নতুন করে আল্লাহর গোলামির জীবন ধারণ করা। নববর্ষে হোক জীবনকে ঢেলে সাজানোর নতুন আত্মপ্রত্যয়। পিছনের সব গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবনের পথ চলা সহজ হোক। দোয়া আমল ও ইবাদত বৃদ্ধি পাক।
মুসলমানের কাছে প্রতিটি দিন মূল্যবান। প্রত্যেকটি সকাল মানেই নতুন আরেকটি সুযোগ। সেই সুযোগটি হলো নিজের ঈমান-আমলকে সমৃদ্ধ করার। ইমাম আজম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতা সাবিত রহ.-কে পারস্যের নওরোজের দিনে হজরত আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং হজরত আলী রা.-কে কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে।
তখন হজরত আলী রা. বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম।’ অর্থাৎ মুমিনের নওরোজ প্রতিদিনই। মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নতুন উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। (আখবারু আবি হানিফা রহ.)
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:৫৭ ৩ বার পঠিত