মহাসংকটে দেশের চা শিল্প। পুরানো গাছ, ভারত থেকে নিম্নমানের চা আমদানি ও অবৈধপথে প্রবেশ, সিন্ডিকেট ও অনিয়মসহ নানা কারণে সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরও হুমকির মুখে এ শিল্প। মান কমে যাওয়ায় বিদেশের বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের চা। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী?
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসাইন বলছিলেন, ‘সরকারকে রেভিনিউ ফাঁকি দিতে গিয়ে আপনি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে চা বিক্রি করে দিচ্ছেন। অকশনে কি মানুষ তাহলে ২০০ টাকায় চা কিনবে?’
চা শিল্পের নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রধানের মুখে এমন ক্ষোভ চা শিল্পের দৈন্যদশা নিয়ে। তার মতে, শ্রমিক সংকট, অব্যবস্থাপনা, কালো বাজারে চা বিক্রির কারণে এ খাত রুগ্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০০১ সালে দেশে চা উৎপাদন হয় ৫ কোটি ৩১ লাখ কেজি। ওই বছর চা রফতানি হয় এক কোটি ৩০ লাখ কেজির মতো। ২০২৩ সালে ১৬৯টি বাগানে চা উৎপাদন হয় ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজির মতো। আর রফতানি হয় মাত্র ১০ লাখ কেজি। মান কমে যাওয়ায় বিদেশের বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের চা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাগানের চা গাছের বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এসব গাছ থেকে এখন আর মান সম্পন্ন চা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজির অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেন, ‘তারা যদি প্লান্টেশনটা চেঞ্জ করে ফেলে তখন উৎপাদনটা আবার সেই হাই লেভেলে চলে যাবে।’
এদিকে, ভারত থেকে আমদানি ও চোরাইপথে নিম্নমানের চা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় দেশের চা অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকে। আর বাগান মালিকদের অনিয়মের কারণে চায়ের ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
ম্যাকসন ব্রাদার্স চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মালিক হুমায়ূন বলেন, ‘যারা এ স্মাগলিং করছে, তাদের দেখা মাত্রই গুলি করে মারতে হবে।’
প্যারাগন গ্রুপ টি এস্টেটের উপদেষ্টা মুফতি এম হাসান বলেন, ‘একদম কম দামে একজন টি ট্রেডার্স চা পেয়ে যাচ্ছেন। তাহলে তিনি কেনো অকশনে দুই থেকে আড়াইশ টাকা দিয়ে চা কিনবেন?’
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসাইন বলেন, ‘এই যে লুটপাট, সেটা তো আগেও হয়েছে। এখন আমরা সবাই মিলে এটা বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’
বর্তমানে হেক্টর প্রতি দেশে চা উৎপাদন হয় এক হাজার ৭৪০ কেজি, ভারতে দুহাজার পাঁচশ কেজি এবং শ্রীলংকায় তিন হাজার তিনশ কেজি। খরা, পোকামাকড়, রোগবালাই সহনশীল ও ক্লোন উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানসম্পন্ন চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানিমুখী করা সম্ভব মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৮:০০ ২ বার পঠিত