জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, `কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লাবাসীর নায্য দাবি। এ দাবি না মানাও জুলুম ছিল।’
কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা বিমানবন্দরও চালুর দাবি জানান।
দেশের বর্তমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ নয়, বাংলাদেশ ভালোবাসার দেশ। এদেশের সকল ধর্মের বর্ণের মানুষ আমরা মিলেমিশে আছি, কারণ বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা বাংলাদেশে কোন মেজরিটি মাইনরিটি মানি না, বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছে তারা সবাই বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। এই মাইনরিটি শব্দ বলে অন্যান্য ধর্মের ভাই-বোনদের ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী দেশের বাইরে থেকে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এখন আমাদের ভাই-বোনরাও এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেছেন তারাও সোচ্চার হয়েছেন। আপনারা দেখেছেন ভারতের হলুদ মিডিয়া যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট যুদ্ধ শুরু করেছেন, মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, তখন জগন্নাথ হল থেকে আমাদের হিন্দু ছেলেমেয়েরা বের হয়ে তার প্রতিবাদ করেছে।’
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মহানগরী জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ভারতের কোন আভ্যন্তরীণ বিষয় আমরা হস্তক্ষেপ করেনি, ভারত বলে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতার অভাব, মানুষ দেখতে পাচ্ছে কোন বছর কতটা কোন ধর্মের মানুষ ভারতের উগ্র একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাছে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে বিশ্ব তার সাক্ষী। বাংলাদেশে এমন নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটে না। সর্বশেষ একটা চরমপন্থী সংগঠনের হাতে নির্মমভাবে চট্টগ্রাম আদালতে একজন আইনজীবী খুন হয়েছেন। তারা চেয়েছিল খুনের মাধ্যমে একটি খুনের গুলি খেলতে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বলেছে, খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করতে তবে নির্বিচারে আমরা সবার গায়ে হাত তুলতে চাই না। আপনারা দেখেছেন গতকাল বিভিন্ন ধর্মের যারা সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আওয়াজ তুলেছেন এদেশ আমাদের সবার। আমরা এখানে কোন সাম্প্রদায়িক বিভাজন চাই না। আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধান উপদেষ্টার এমন উদ্যোগকে। তবে উদ্যোগ নিয়ে থেমে গেলে হবে না, এই যাত্রা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। এর আগের দিন তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দেশপ্রেমিক ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি বসেছেন, সবাই আমরা একসঙ্গে আওয়াজ তুলেছি, আমরা কোন আগ্রাসন সহ্য করব না। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি আমরা কাউকে ছেড়ে দেব না। আমাদের জীবন দেব তবুও বাংলাদেশের আধা ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেব না।’
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য। এখানে কোন পেশী শক্তি অথবা টাকার খেলা চলবে না। এ রাস্তা বন্ধ করতে হবে এবং সেজন্য কিছু সংস্কারও প্রয়োজন। সেই সংস্কারের সরকার হাত দিয়েছে আমরা অনুরোধ করবো সরকারকে সংস্কারের গতি বাড়িয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতীয় উপহার দেয়ার জন্য। যাতে করে আপনারা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন। নির্বাচনের জন্য আমরা আপনাদের চাপ দিচ্ছি না, আবার অনুরোধও করবো মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করে সময় দীর্ঘায়িত করবেন না। আপনারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতিকে নির্বাচন উপহার দেন। গত তিন নির্বাচনে জাতি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। বিশেষ করে জাতির ৪২ ভাগ ভোট যারা যুবক তারা একটা ভোটও দিতে পারেনি। আমরা আমাদের যুবকদের হাত ধরে এবং তাদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীন পরিবেশ পেয়েছি, আমরা চায় আগামীতে তারা শুধু ভোট দেবে না, তারা জাতিকে নেতৃত্ব দেবে ইনশাআল্লাহ।’
পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘এক মাসের মাথায় তৎকালীন বিডিআরের সদর দফতর ঢাকা পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাকে তারা হত্যা করল। তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করল। নির্মমভাবে হত্যা করার পর লাশগুলো ড্রেনে ভাসিয়ে দিল। এদের মধ্যে কিছু মরদেহ তারা গোপন করে ফেললো। রাতের অন্ধকারে খুনিদের নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা বের করে দিল। সরকার এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হলো, কিন্তু এই দুটি তদন্ত কমিশনের কিছুই জনগণকে জানতে দেয়া হলো না। সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী বিডিআরের কতিপয় সদস্যকে এনে তাদের সঙ্গে বসলেন, তাদের সকল দাবি মেনে নিলেন। সেনাবাহিনীকে বিডিআর কর্মকর্তাদের সাহায্য করার রাস্তা বন্ধ করে রেখে বললেন আমি দেখছি। দেখতে দেখতে সব শেষ হয়ে গেলো। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানায় পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত অবশ্যই করতে হবে। কারণ এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর মনবল ধ্বংস করা হয়েছে। বিডিআরকে খতম করা হয়েছে। আগে বিডিআর ছিল সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী, তাদের লোগোতে ছিল বাংলাদেশের রাইফেল। এখন তাদেরকে বানানো হয়েছে সীমান্তের চৌকিদার।’
এর আগে শুরুতে অর্থ সহ পবিত্র কোরআন মজীদ থেকে তেলাওয়াত করেন ড. ক্বারী আবরার আহম্মদ। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ মাছুম মিয়ার পিতা মুহাম্মদ শাহীর মিয়া।
উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর ও সম্মেলনের সভাপতি কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে বক্তব্য দেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম ও মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন ও মুহাম্মদ আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভেকেট জসীম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, মো. আব্দুস সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমীর এডভোকেট মো. শাহাজাহান, উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিন, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ড. মোবারক হোসাইন, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, উত্তর জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সোহেল, অ্যাডভোকেট নাছির আহাম্মদ মোল্লা ও মেশাররফ হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবির কুমিল্লা মহানগর সভাপতি নোমান হোসেন নয়ন ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৮:০৫ ৪ বার পঠিত