মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বিশ্ব ইজতেমায় আনার অনুমতি চেয়ে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে সড়ক অবরোধ করেন তার অনুসারীরা। এর ফলে এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় অফিসে যাওয়া সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে তোলে।
আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের উপস্থিতি চেয়ে তার অনুসারীরা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তবে ২০১৮ সাল থেকে মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না।
মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়ে ২০১৮ সালে তাবলিগ জামাতের ভেতর তীব্র বিভাজন তৈরি হয়। তার কিছু বক্তব্যকে শরিয়ত বিরোধী ও ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী বলে দাবি করেন তাবলিগ জামাতের আরেকটি অংশ। এর ফলে দেশে তাবলিগ জামাতের দুই ভাগে বিভক্তি দেখা দেয়। এ দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে সাদবিরোধী অংশের চাপের মুখে তাকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া বন্ধ করা হয়।
বিশেষ করে, মাওলানা সাদের একটি বক্তব্য, যেখানে তিনি কোরআন ও হাদিস বোঝার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এতে আলেম সমাজের একটি বড় অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ফলে সরকার তার উপস্থিতি জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মঙ্গলবার সকালে সাদপন্থীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে জড়ো হন এবং তাবলিগ জামাতের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। তবে পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা সড়কে অবস্থান নেন। সকাল ৯টার দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের আলোচনা হয় এবং উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ১০ জনের একটি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যাওয়ার অনুমতি পায়।
সাদপন্থীদের এক মুরুব্বি জানান, ‘মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আনার বিষয়ে আমরা কোনো প্রকার বাধা মানতে রাজি নই। গত কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের ওপর যে জুলুম হয়েছে, তা আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’
অবরোধের কারণে কাকরাইলসহ আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। পথচারীরা জানান, এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তাদের অফিসের যাওয়ার পথে সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাবলিগ জামাতের এ বিভাজন দীর্ঘমেয়াদে ধর্মীয় সম্প্রীতিকে ব্যাহত করতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আলেম সমাজের সমন্বিত উদ্যোগে এ সংকট সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। আলেমরা চেষ্টা করছেন, তাদের বোঝাতে, মাওলানা সাদ তার গোমরাহী থেকে ফিরে আসলেই তারা এ বিভাজন মিটিয়ে দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
তাবলিগ জামাতের এই বিভাজন ও সড়ক অবরোধের কারণে জনজীবনে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৮:১২ ৯ বার পঠিত