বছরের পর বছর উন্নয়ন না হওয়ায় অযত্ন অবহেলায় বেহাল দশা নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা সড়কের। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত পনের বছর ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এই সড়কটি। দ্রুত স্থায়ীভাবে সংস্কারের দাবি এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগীদের। তবে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।
গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা জুড়ে পানি আর বড় বড় গর্ত। প্রতিদিন উলটে যাচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন। সড়কটির এই দুরবস্থা নতুন নয়। প্রায় দেড় দশক ধরেই এই অবস্থা বিদ্যমান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে ঢাকার পোস্তগোলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাগলা বাজার থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত বড় বড় গর্ত আর পানিতে তলিয়ে থাকায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা। একই অবস্থা বিরাজমান চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত। প্রতি বছর পুরো বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাটির অধিকাংশ এলাকা। বড় বড় গর্ত আর খানখন্দের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।
সময় সংবাদকে তারা তাদের আরও অভিযোগ করেন, গর্তে চাকা পড়ে প্রতিদিন যানবাহন উলটে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। যন্ত্রাংশ ভেঙে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিবহন মালিক ও চালকরা। এছাড়া প্রচণ্ড ধুলোবালির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছেন সড়কে চলাচলকারীরা। বিগত আওয়ামী সরকারের টানা পনের বছর ক্ষমতাকালীন সময় এই সড়কের হয়নি কোন উন্নয়ন। বেহাল অবস্থার কারণে সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।
সড়কটির এই দুরবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীসহ আশপাশের পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা। সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ ও চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় বিদেশি বায়াররা কারখানা পরিদর্শনে আসতে বিমুখ হচ্ছেন। ফলে অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়ছেন পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা। রফতানি খাতের গতি ফেরাতে দ্রুত সড়কটি মেরামতসহ আধুনিকায়ন করার দাবি করছেন তারা।
ফতুল্লার রফতানিমুখী পোশাক কারখানা নীট রেডিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে বিদেশি বায়াররা আমাদের ফ্যাক্টরি ভিজিট করতে আসতে চায় না। ফলে কারখানার কর্মপরিবেশ ও উৎপাদনের অবস্থা আমরা তাদের দেখাতে পারি না। তাছাড়া বায়ারদের সঙ্গে ঢাকায় মিট করতে গিয়েও আমরা যানজটের কারণে সময়মতো পৌঁছতে পারি না। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত সড়কটি চার বা ছয় লেনে উন্নীত করা হোক। এতে আমাদের রফতানির গতি ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি’।
তবে অচিরেই মেরামতের আশ্বাস দিয়ে সড়কটিকে ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব প্রণয়ন করার কথা জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস।
সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘পোস্তগোলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত সড়কটিকে ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কটির বিদ্যামান অবস্থা নিরসনে মেরামত কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি অচিরেই মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হবে’।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবনাটি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান সড়ক বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৭:৫১ ৮ বার পঠিত