কিয়ামতের আগে কি স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন শুরু হবে?

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » কিয়ামতের আগে কি স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন শুরু হবে?
শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪



কিয়ামতের আগে কি স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন শুরু হবে?

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কিয়ামত এমন একটি সময় যা মানব ইতিহাসের শেষ অধ্যায়। কিয়ামতের আগে অনেক নিদর্শন প্রকাশ পাবে, যা হাদিস ও কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে অনেক আগ্রহ ও উদ্বেগ বিদ্যমান। বিশেষ করে কীভাবে সমাজ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে।

একটি বহুল আলোচিত বিষয় হলো—কিয়ামতের আগে স্বর্ণ মুদ্রার (দিনার) প্রচলন। মুসলিম বিশ্বে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা দীর্ঘকাল ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। অনেকেই ধারণা করেন, আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতনের পর পুনরায় স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা প্রচলিত হবে।
কিয়ামতের আগে স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন সম্পর্কিত হাদিস ও আয়াত কী আছে? যদিও সরাসরি কোরআনের কোনো আয়াতে কিয়ামতের আগে স্বর্ণ মুদ্রার (দিনার) পুনরায় প্রচলন সম্পর্কে উল্লেখ নেই, তবে হাদিস ও বিভিন্ন ইসলামি গ্রন্থে এ বিষয়ে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

নবী মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক সময় আসবে যখন পৃথিবী থেকে কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না, সমস্ত সম্পদ (আস্তে আস্তে) ধ্বংস হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৭)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হবে। ঐতিহ্যবাহী মুদ্রাগুলোর উপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে। এ সময় হয়তো স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার গুরুত্ব পুনরায় বৃদ্ধি পাবে, কারণ এগুলো ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

এছাড়াও, স্বর্ণ ও রৌপ্যকে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান মুদ্রা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) এর যুগে স্বর্ণের ‘দিনার’ এবং রৌপ্যের ‘দিরহাম’ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আধুনিক কাগজ মুদ্রার চেয়ে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা সবসময়ই মূল্যবান এবং বাস্তব সম্পদের ওপর নির্ভরশীল।

অনেক ফকিহ ও ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন যে কিয়ামতের আগে অর্থনৈতিক সংকটের ফলে মানুষ পুনরায় স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার দিকে ফিরে আসবে। বিশেষ করে, বর্তমান ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা কমে গেলে, সোনার মতো স্থায়ী মূল্যবান মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে পারে। ইবনু কাসির (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ তে উল্লেখ করেছেন যে, কিয়ামতের আগে অর্থনৈতিক সঙ্কট ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে, যা মানুষকে পূর্বের অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে ফিরিয়ে নেবে।

স্বর্ণ মুদ্রার পুনঃপ্রচলন একটি ধারণা, যা ইসলামের প্রাচীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা এবং আধুনিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের আলোকে নতুন করে আলোচিত হচ্ছে। যদিও কিয়ামতের পূর্বে স্বর্ণ মুদ্রার পুনরায় প্রচলন সম্পর্কে সরাসরি কোনো কোরআনি আয়াত বা নির্দিষ্ট হাদিস পাওয়া যায় না, তবে হাদিসের ইঙ্গিত ও ইসলামি ঐতিহ্যের আলোকে ধারণা করা যায় যে, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতনের পর মানুষ আবারও সোনার মতো স্থায়ী আর মূল্যবান মুদ্রার দিকে ফিরে যাবে। ইসলামি অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা সবসময়ই বাস্তব সম্পদের ভিত্তিতে ছিল। তা মানুষকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে আশ্বস্ত করেছে।

বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর ক্রমবর্ধমান অনাস্থা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, আদৌ কি আমরা আবারও ঐতিহ্যবাহী মূল্যমানের মুদ্রার দিকে ফিরে যাব? ইসলামের ইতিহাস এবং অর্থনৈতিক শিক্ষাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, সংকটকালীন সময়ে স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য মূল্যমানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়তে পারে। কিয়ামতের নিদর্শনগুলো প্রকাশের আগমুহূর্তে, এ ধরনের পরিবর্তন শুধুমাত্র অর্থনীতিতেই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরেও প্রভাব ফেলতে পারে।

অতএব, স্বর্ণ মুদ্রার পুনঃপ্রচলন কিয়ামতের প্রাক্কালে একটি সম্ভাব্য বাস্তবতা হতে পারে, যা মানবজাতির জন্য একটি শিক্ষার মাধ্যম—যেখানে আমরা আবারো ইসলামের মূল ভিত্তি ও স্থায়ী সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে শিখব।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৭:০৪   ১৪ বার পঠিত  




ছবি গ্যালারি’র আরও খবর


আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য শিক্ষা গ্রহন করতে হবে - মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা দেশের মানুষ মানবে না: টিপু
রাঙ্গামাটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের কৃষি ও হস্ত শিল্পের প্রদর্শনী



আর্কাইভ