তিন মাসেও চালু হয়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেয়া নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখনও এই কার্যালয়ে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন ও নতুন পাসপোর্ট করতে আগ্রহী গ্রাহকরাসহ অন্যান্য সেবা গ্রহীতারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া আগুনে আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। দ্রুত পাসপোর্ট অফিস চালু করার দাবি জেলাবাসীর। তবে অচিরেই সংস্কারের কাজ শুরু করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস জেলা প্রশাসকের।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাত নয়টার দিকে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। প্রধান ফটকের তালা ভেঙে শত শত দুর্বৃত্তের দল ভেতরে ঢুকে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে চার তলা ভবনটিতে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সার্ভার, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও যাবতীয় নথিপত্রসহ গ্রাহকদের আট হাজার তৈরি পাসপোর্ট। ধংসস্তুপে পরিণত হয় সরকারি এই কার্যালয়টি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ।
এ ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পুরো জেলাবাসী। প্রতিদিন সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ।
সম্প্রতি রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীর পাসপোর্ট অফিসে নারায়ণগঞ্জের গ্রাহকদের অঞ্চলভিত্তিক সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হলেও অধিক দূরত্ব ও গ্রাহকদের চাপের কারণে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না এই জেলার গ্রাহকরা।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি। আন্দোলনে পুড়িয়ে দেয়ার আগে প্রতিদিন জেলা সদরসহ সব উপজেলা থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার গ্রাহক বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসতেন বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে প্রধান ফটকের সামনে দেখা মেলে বেশ কয়েকজনের। কথা হয় ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে।
পাসপোর্ট হারিয়ে সময় সংবাদকে নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন ফতুল্লার রঘুনাথপুর এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের আগে আমি পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলাম। ডেলিভারির তারিখে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি কোন মানুষজন নেই। একটা সিকিউরিটি গার্ড পর্যন্ত দেখলাম না। কেউ যে একটা তথ্য দেবে এমন একটা মানুষও এখানে নেই। পরে জানতে পারলাম এখানে আগুন দেয়ার দিন আট হাজারের মতো রেডি পাসপোর্ট পুড়ে গেছে। আমার পাসপোর্টও নাকি পুড়েছে। পরে বিভিন্নভাবে খবর নিয়ে জানতে পারি এই জেলার পাসপোর্ট কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী অফিসে করা হচ্ছে। তিন অফিস ঘুরে পরে আমি পাসপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি’।
আলমগীর হোসেনের মতো আরও হাজারও মানুষ এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ফতুল্লার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ। ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েও সুচিকিৎসা পাইনি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাব। কিন্তু আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। নবায়ন করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এখন পর্যন্ত নবায়ন করাতে পারিনি’।
তোফাজ্জল হোসেন নামে আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট নবায়ন করাব। নারায়ণগঞ্জের অফিসে কয়েকবার এসে ঘুরে গেছি। এখানে গ্রাহকদের তথ্য দেয়ার জন্য কোন লোক নেই। কোন ধরনের নোটিশও টানানো হয়নি। আমরা কোথায় গেলে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা পাবো সেটাও কেউ বলতে পারছে না। পরে ডিসি অফিসে গিয়ে জানতে পারলাম এলাকা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা দেয়া হচ্ছে কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে। সেখানে গিয়েও নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছি। ছবি তুলতে ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার জন্য দুদিন গিয়েও দীর্ঘ লাইনের কারণে ফিরে এসেছি। আমরা এই ভোগান্তি আর চাই না। আমরা চাই দ্রুত আমাদের পাসপোর্ট অফিসটি চালু করা হোক। সরকারের কাছে আমি সেই দাবি জানাচ্ছি।
অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসটি সংস্কার করে সব ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু করার দাবি করছেন ভুক্তভোগীরাসহ জেলাবাসী।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘জণগণের ভোগান্তি দূর করতে ইতোমধ্যে ভবনটি সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে। আশা করি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০২:১৮ ৩০ বার পঠিত