ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তি সমর্থন করে না

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তি সমর্থন করে না
সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪



ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তি সমর্থন করে না

‘তিন দিন হতে খাইতে না পাই। নাই কিছু মোর ঘরে। দারা পরিবার বাড়িতে আমার উপোস করিয়া মরে।’ নবীর শিক্ষা নামক একটি কবিতার প্রথম দুটি চরণ। যেখানে একজন অসহায় দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্যতার চিত্র উঠে এসেছে। যিনি কিছু পাওয়ার আশায়, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসেছিলেন।

আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে ভিক্ষার পরিবর্তে কোনো কাজ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। সামনে আমরা বর্ণনাটি উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।

গাড়িতে উঠেছেন, ঠিক এই মুহূর্তে একজন এসে হাত পাতলেন-এমন কিছু পরিস্থিতির শিকার বিভিন্ন জায়গায় আমাদেরকে প্রায়ই হতে হয়। অনেকেই সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সাধ্য মতন উপকার করার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে বিব্রতবোধ করেন। কেউবা বিপদে পড়ে লজ্জায় কিছু না কিছু দিয়ে অংশ গ্রহণ করেন। সম্ভ্রান্ত দীনদার শ্রেণির লোকজন এমন অবস্থায় নিজেদেরকে অপমানিত বোধ করেন।

এই যে ভিক্ষাবৃত্তি বা কালেকশন সংস্কৃতি, এটি কী বন্ধ করা যায় না? বন্ধ হবার নয় এমন সংস্কৃতি? ইসলাম কী এভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তির অনুমোদন করে? কিংবা মানুষের বাসা বাড়িতে বাজারে ঘুরে হাত পাততে বলে?

‎কখনই নয়! বরং ইসলাম দান সাদকার কথা বলে। দান করতে বলে। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করতে শেখায়। কখনো হাত পাততে শেখায় না। একান্ত অপারগতা বশত কেউ যদি কোনো কর্ম করতেই না পারেন। কিংবা এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা না থাকে। পরিবারে কর্মক্ষম আর কেউ না থাকেন।

বয়োবৃদ্ধ, শারীরিক প্রতিবন্ধী এমন হয়ে থাকেন। তবে হয়তোবা, এমন ব্যক্তির জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতার অবকাশ থাকতে পারে। তাই বলে এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয় কখনোই। আর সুস্থ মানুষের জন্য তো কখনোই ভিক্ষাবৃত্তি করা কাম্য নয়।

সবসময় অনেকের কাছে টাকা পয়সা থাকে না। দান করার ইচ্ছে থাকলেও, তারা তখন লজ্জা অনুভব করেন। নিজেকে ছোট মনে করেন জনসম্মুখে। তাই এভাবে কোনো জনসম্মুখে, জনতার মাহফিল মজলিসেও কারও থেকে জোর করে টাকা পয়সা গ্রহণ করা উচিত নয়। এমন সময় মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে দান করেন। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর জন্য দান করা হয় না। এমনটি এক ধরনের জুলুম ও অন্যায়। যা থেকে ইসলাম আমাদেরকে বিরত থাকতে নির্দেশ করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

আর তোমরা নিজেরা একে অপরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কোনো বিচারকের কাছে তা টোপ হিসাবেও উপস্থাপন করো না। যেন তোমরা জ্ঞাতসারে মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করতে পারো। (সুরা বাকারা : ১৮৮)

অথচ হাদিসে দান-সাদকার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সাহাবি আবু উমামা রা. থেকে বর্ণনা রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

হে আদম সন্তান! তোমার প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ যদি তুমি (সৎকাজে) খরচ করো, তবে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু তুমি যদি তা গচ্ছিত রাখো, তবে তা তোমার জন্য অকল্যাণকর। (অর্থাৎ, কোনো কাজে লাগল না) অবশ্য প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ জমা রাখলে তাতে কোনো দোষারোপ করা হবে না। আর তোমার পোষ্যদের হতেই (দান-সাদকা করা) আরম্ভ করো। নীচের হাত হতে উপরের হাত উত্তম। (সুনানে তিরমিজি)

‎সাহাবি হাকীম ইবনে হিযাম রা.এর সূত্রে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

উপরের হাত (তথা দানকারীর হাত) নীচের হাত (দানগ্রহণকারীর হাত) অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদেরকে দিবে যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তুমি বহন করো। আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হতে দান-সাদকা করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা হতে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা হতে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। (সহিহ বুখারি)

উপর্যুক্ত হাদিস দুটি আমাদেরকে দান-সাদকা করতে উদ্বুদ্ধ করে। দান গ্রহণের পরিবর্তে খরচ করতে, দান করতেই বরং শিক্ষা দেয়। আর প্রয়োজনে সামান্য কিছু সম্পদ সঞ্চয় করার প্রতিও উৎসাহিত করে। যা আমাদের জন্য উপকারী হবে। প্রয়োজনে কাজে আসবে।

তবে আমরা কেন মানুষের কাছে হাত পেতে নিজেদেরকে ছোট করব? ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে মন্দ ধারণা তৈরি করতে কেন সাহায্য করব? আর হাদিসে যে ব্যাক্তি নিজেকে পবিত্র রাখতে চায়। তার জন্য স্বচ্ছলতার ঘোষণাও করা হয়েছে। তবে কেন আমরা মানুষের কাছে সাহায্য চাইব?

আমাদেরকে ঐ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, যা ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে। ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা মেহনত করো সবে’। এটাই হলো ইসলামের সঠিক শিক্ষা। এক লোক নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ঘরে খাবার নেই। আমাকে কিছু সাহায্য করুন।

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ভিক্ষা ছেড়ে কাজ করে জীবিকা উপার্জন করো। লোকটি বলল, আমার তো তেমন কিছু নেই। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

তোমার ঘরে কী আছে? লোকটি বলল, একটি কম্বল আছে। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেটি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে একটি কুঠার কিনে নাও। তারপর তা দিয়ে গাছ কেটে তোমার জীবিকা নির্বাহ করো। (সুনানে তিরমিজি)’

হাদিসের শিক্ষা হলো, আমরা পরিশ্রম করে অর্থ সম্পদ উপার্জন করব। ভিক্ষা করে, মানুষের কাছে হাত পেতে নিজেকে ছোট করব না। প্রত্যেকেই সাধ্য অনুযায়ী দান-সাদকা করতে চেষ্টা করব। নিজেরা দাতা হতে চেষ্টা করব। আমরা গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব। তাদেরকে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য উৎসাহিত করব। কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দেব।

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:৩৪   ২৪ বার পঠিত  




ছবি গ্যালারি’র আরও খবর


আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য শিক্ষা গ্রহন করতে হবে - মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা দেশের মানুষ মানবে না: টিপু
রাঙ্গামাটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের কৃষি ও হস্ত শিল্পের প্রদর্শনী



আর্কাইভ