মানুষের কতই না বিচিত্র শখ থাকে! এমনই এক বিচিত্র শখের অধিকারী ছিলেন র্যান্ডি ‘আর ডাব’ উইলিয়াম। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তার ভ্রমণ করা হয়ে গেছে। তারপর হঠাৎ একদিন মনে হলো নিজের একটি দেশ থাকলে ভালো হয়। সেই ভাবনা থেকেই ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোর পাশের মরুর বুকে ১১ দশমিক ০৭ এক জমি কিনে নিজের স্বাধীন দেশের গোড়াপত্তন করলেন র্যান্ডি। নাম দিলেন স্লোজামাস্তান।
স্বাধীনতা ঘোষণা করা দেশটির পুরো নাম দ্য ইউনাইটেড টেরিটোরিজ অব দ্য সভরেইন ন্যাশন অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব স্লোজামাস্তান। রাজধানীর নাম ডাবল্যান্ডিয়া। দেশটির গোড়াপত্তন করা হয়, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। স্বাধীনতা ঘোষণা করে, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ সালেই। কিন্তু এখনো কোনো কূটনৈতিক স্বীকৃতি পায়নি দেশটি। তবে সুলতানের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটের বলা হয়েছে, আর কেউ স্বীকৃতি না দিলেও সুলতানের মা রাষ্ট্র হিসেবে স্লোজামাস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
১২টি অঙ্গরাজ্যের দেশটির সুলতানের দাবি অনুসারে জনসংখ্যা ৫০০ জন। আরও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জন দেশটির নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য আবেদন করে রেখেছে এমনটাই দাবি সুলতান র্যান্ডির কার্যালয়ের। মজার ব্যাপার হলো, দেশটিতে একমাত্র অফিস সুলতানের কার্যালয়। এখান থেকেই স্লোজামাস্তানের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আরও মজার ব্যাপার হলো সুলতানের কার্যালয়টি কোনো ভবনে নয় বরং খোলা মরুর বুকে কার্যক্রম চালায়।
এখানেই থেমে থাকেননি র্যান্ডি। তিনি তার নতুন রাজ্যের জন্য সীমান্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিয়োগ দিয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীও। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম ‘পেট্রল এজেন্ট’। এই বাহিনীর প্রধানের মার্ক ‘কিড’ করোনা। এছাড়া দেশটির জরুরি সেবা বিভাগও রয়েছে। এই বিভাগের প্রধানের নাম এল রেসকিউ রিক।
এছাড়া স্লোজামাস্তান দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীও রয়েছে। এই বাহিনীতে কতজন সদস্য রয়েছে তা না জানা গেলেও এর কমান্ডারের নাম ম্যাট কন্ডে।
দেশটির অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি তবে পর্তুগীজ এবং স্প্যানিশও স্বীকৃত। এসবের বাইরেও দেশটির নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। মুদ্রার নামটি অবশ্যই খানিকটা বিটকেল। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের অনুকরণে দেশটির মুদ্রার নাম রাখা হয়েছে ডুবল্। কেবল মুদ্রা নয়, দেশটির নিজস্ব পাসপোর্টও রয়েছে।
পেশায় রেডিও সম্প্রচারক উইলিয়াম র্যান্ডি জানান, যখন রেডিওতে আমার কোনো কাজ থাকে না তখন আমি মূলত দেশ ভ্রমণ করি। জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৩টি দেশের সবকটি দেশই তিনি ভ্রমণ করেছেন। তার ভ্রমণ করা সবশেষ দেশ ছিল তুর্কমেনিস্তান। দেশটিতে যাওয়ার আগে সিএনএনকে বলেন, ‘আমি এমন একটি দেশ ভ্রমণ করেছি যার কথা বেশিরভাগ মানুষই শোনেননি। স্লোজামাস্তান তৈরির একটি কারণ হলো আমি ১৯৩টি দেশের পর ১৯৪তম দেশও চেয়েছিলাম! যাতে আমি ভ্রমণ করতে পারি।’
দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন সুলতান। সালতানাত বা সুলতান শাসিত দেশের নাম কেন গণপ্রজাতন্ত্রী হলো এমন এক প্রশ্নের জবাবে উইলিয়াম জানান, তিনি দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চান না। তাই দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। তার দাবি এর মধ্য দিয়ে এক অর্থে গণতন্ত্র চালু থাকল।
দুই বছর আগে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও দেশটিকে এখনো কোনো দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে সুলতান উইলিয়াম বেশ হতাশ। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুটা হতাশ। আমরা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং মাইস্পেসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে স্বীকৃতি দেয়ার আবেদন জানিয়েছি। ই-মেইল এবং সরাসরি বার্তা পাঠানোর পরও আমাদের বার্তাগুলো অপঠিত রাখা হয়েছে। সম্ভবত তারা সেগুলো স্প্যাম ফোল্ডারে আটকে গেছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৩:২৯ ৫৭ বার পঠিত