ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পুকুরে গোসল করার সময় কিশোরীকে অশ্লীল ভিডিও দেখানোর প্রলোভন দিয়ে পাশের পাট ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের পর গলায় সালোয়ার পেঁচিয়ে হত্যা করে শাহাদাত হোসেন।
গ্রেফতার শাহাদাত হোসেন (১৬) জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
পুলিশ সুপার জানান, গত ২৮ জুন দুপুরে ভাঙ্গা পৌর সদরের হোগলাডাঙ্গী সদরদী গ্রামের এক কিশোরী বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে যায়। এসময় ওই কিশোরীকে অশ্লীল ভিডিও দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেশী টুকু মাতুব্বরের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র শাহাদাত হোসেন তাকে পাশের পাট ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ওই কিশোরী এই ঘটনা তার বাবা-মাকে বলে দেয়ার কথা জানালে শাহাদাত তোকে বলতে মানা করে। কিন্তু ওই কিশোরী বারবার বলে যে সে বলে দিবে। একপর্যায়ে ওই কিশোরীর পরনের সেলোয়ার তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, ২৯ জুন রাতে শাহাদাত হোসেনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় ঘটনার জবানবন্দি দেয় সে। ঘটনার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় শাহাদাত। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, ওই কিশোরীকে হত্যা করে শাহাদাত ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইনের দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সে নিজের বাড়িতে এসে এই ঘটনার বিষয়ে তার বাবা টুকু মাতুব্বরকে জানায়। তখন তার বাবা তাকে গালমন্দ করে। অভিযুক্তের বাবা বিকেল ৫টার দিকে ধান ক্ষেত দেখতে যাওয়ার ভান করে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরীর মরদেহ দেখে এসে একটি নাটক সাজিয়ে কিশোরীর মাকে বলে যে, পাটক্ষেতে তোমার মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। টুকু মাতুব্বরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে, পরে সে মূল ঘটনার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
নবম শ্রেণির একজন ছাত্র একা কিভাবে ওই কিশোরীকে হত্যা করলো এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, ওই কিশোরী সহজ সরল ও বোকা টাইপের। শারীরিক ভাবেও দুর্বল ছিল। তাকে একাই হত্যা করে শাহাদাত। ধর্ষণের পর কিশোরীর বুকের ওপর বসে তার গলায় সালোয়ার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এর আগে পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে এবং মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত হোসেনকে ভাঙ্গা পৌরসভার হোগলাডাঙ্গী এলাকায় তার বসতবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে ওই কিশোরীর সালোয়ার, কামিজ ও ওড়না উদ্ধার করা হয়। এদিকে শাহাদাতের মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও’র একাধিক ক্লিপ পাওয়া যায়। সে অশ্লীল ভিডিওতে আসক্ত ছিল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমদাদ হুসাইন (প্রশাসন), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা (ক্রাইম এন্ড অবস), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) তালাত মাহমুদ শাহানশাহ, গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (কোতোয়ালি জোন) আব্দুল মতিন, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর, ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন আল রশিদসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৭:৩০ ১৮ বার পঠিত