প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ দৃঢ়ভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ কখনোই কোনো বিদেশি চাপের কাছে মাথা নত করবে না। তিনি আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষনে বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চাপ যতই আসুক না কেন, বাঙালিরা কখনোই সেই চাপের কাছে মাথা নত করবে না।’ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এ দেশ আমাদের। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিনিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।” “আমরা (আওয়ামী লীগ) সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র এনেছি। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ এগিয়েছে ”-উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরাই আমাদের দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করব।” ছয়-দফা ছিল বাংলাদেশের জনগণের ‘মুক্তি সনদ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা রোল মডেল হিসাবেই এগিয়ে যাব।” তিনি দেশের জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে আর কেউ দমন করতে পারবে না। তিনি বলেন, “গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।” এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সচেতন হতে এবং দেশের মানুষের পাশে থেকে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরার নির্দেশ দেন, যাতে তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ খেলতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাইরের কোনো শক্তি বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না, বরং তাদের ব্যবহার করা হবে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর, বিএনপির উৎফুল্ল মেজাজ প্রসঙ্গে বলেন, তারা মনে করে- অন্য কোথাও থেকে কেউ এসে, তাদের আনন্দ-উল্লাস করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউই এটি করবে না (তাদের ক্ষমতায় আনতে) এবং কখনও কেউ তা করে না, বরং ব্যবহার করে। এটি (তাদের) ব্যবহার করবে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা দেবে না।” তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষা করেছে এবং দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে তারা (বিএনপি) আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। এক দিক থেকে এটি ভাল, যে তারা যদি অগ্নিসংযোগ সহিংসতা অবলম্বন করে এবং মানুষকে হত্যা করে, তবে তারা মার্কিন ভিসা পাবে না।” তিনি বলেন, যাদের কথায় তারা (বিএনপি) নাচে, তারা তাদের (বিএনপি) ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, “আমাদের কিছু করার নেই। এ নিয়ে আমাদের ভাবারও কিছু নেই।” তিনি (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে) আগেই বিএনপিকে আন্দোলন করতে দিতে বলে দিয়েছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা কতো আন্দোলন করতে পারে, করতে দিন। আমরা কিছু বলব না।’
তবে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবসময় তাদের চোখ খোলা এবং ক্যামেরা চালু রাখতে বলেছেন, যাতে তারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো অগ্নিসংযোগ সহিংসতা, মানুষ পুড়িয়ে মারা এবং মানুষ হত্যার পুনরাবৃত্তি করতে না পারে। তবে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) উসকানি দিয়ে দেশের বাইরে ছবি পাঠাতে পারে। তারা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা বলেন, তারা দেশের জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরাই এদেশে গণতন্ত্র এনেছি, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা থাকায়, বাংলাদেশে আজ অগ্রগতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শাহজাহান খান ও সিমিন হোসেন রিমি, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা উত্তর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ-সভাপতি সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
১৯৬৬ সালের ৭ জুন, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বাঙালিদের ‘মুক্তি সনদ’ ছয়-দফা দাবির ভিত্তিতে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র তিনিই ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন সাধারণ নির্বাচন এবং ২০০৬ সালে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণকে মনে রাখতে হবে যে, খালেদা জিয়া ভোট জালিয়াতির অভিযোগে দু’বার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ কখনো পরাজয় বরণ করেনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিবারই জনগণের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং কখনো ক্ষমতা দখল করেনি।
বিএনপি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে তারা ভোটার বিহীন নির্বাচনের কথা বলে। ভোটার বিহীন কে? খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান ও এরশাদ ছিলেন ভোটার বিহীন। তারা ভোটার বিহীন ছিলেন বলে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী ব্যক্তির পকেট থেকে গঠিত দলের নেতারা এখন গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোট কারচুপির কথা বলেন।
তিনি বলেন, “তোমরা ভোট ডাকাত, তোমরা গণতন্ত্র জানো না, তোমরা কারফিউ গণতন্ত্র জানো।” তিনি বলেন, “এটা বাঙালিদের জন্য দুর্ভাগ্য, কারণ, তাদের কাছে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, যারা দেশে গণতন্ত্র এনেছে তাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এটা কিছুই নয়, আসলে তারা আজকের জনগণের উন্নয়ন পছন্দ করে না। কারণ, তাদের এখন পোশাক ও খাবার রয়েছে এবং তারা চিকিৎসা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে।’
সব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা খাদ্য উৎপাদন করব, আমরা আমাদের খাদ্য খাব এবং আমাদের পুষ্টি নিশ্চিত করব।
এ প্রসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে খাদ্য শস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই এবং ইনশাআল্লাহ দেশে কোনো খাদ্যের অভাব হবে না।” তিনি বলেন, “আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়াব এবং রপ্তানি করব।”
রপ্তানির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর তৈরী পোশাকের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না, বরং ডিজিটাল ডিভাইস তৈরি করবে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশকে বাস্তবায়িত করেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ খাতে দেশে বিপুল বিনিয়োগ এসেছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার এ খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবে, যারা দেশে-বিদেশে কাজ করবে। ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হবে আইসিটি ডিভাইস।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৯:১৩ ৯৮ বার পঠিত