ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার পানি বিক্রি করে দিচ্ছে- এমন অভিযোগ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার (২৪ জুন) রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাকে বাদ দিয়ে তারা (নরেন্দ্র মোদী- শেখ হাসিনা) মিটিং করছেন।
তিনি (মোদী) বাংলা বিক্রি করে দিচ্ছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মনে রাখবেন পানির আরেক নাম জীবন। পানিবণ্টন চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আগামী দিনে পানি পাবেন না। কী করে চুক্তি হয়? তিস্তায় তো পানিই নেই। গায়ের জোরে তিস্তা দিয়ে দিচ্ছে ওরা। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষ সমস্যায় পড়বে। আমি আজ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে (মোদী) চিঠি দিয়েছি।
সরকারি চিঠির বিষয়ে জানা যাচ্ছে, মোদীকে চিঠি দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, তিস্তা ও গঙ্গা দুটিই পশ্চিমবঙ্গের। তার প্রশ্ন, তাকে না জানিয়ে কেন বৈঠকে বসল দুই দেশ।
মমতা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। আমার আমলে ইন্দো-বাংলাদেশ রেল সার্ভিস শুরু হয়েছিল। আমি তখন রেলমন্ত্রী ছিলাম। বাস সার্ভিসও করে দিয়েছি।
গঙ্গা চুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এ চুক্তির জন্য আমরা ভুগছি। গঙ্গার পলি খনন করা হয় না। নদী খনন না করার ফলে কলকাতা বন্দরও সমস্যায় পড়েছে। এসব করে বাংলাকে শেষ করে দিয়ে ভাতে মারার চক্রান্ত করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, তারা (মোদী সরকার) বলছে তিস্তার পানি দেবে। মনে হচ্ছে মহারাজ হয়ে গেছে। নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। সবে নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখনও এমপিদের শপথগ্রহণ শেষ হয়নি। এর মধ্যে বিক্রি করে দিল বাংলার পানি! আমাদের না জানিয়ে?
তিনি বলেন, আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, এরপরও যদি না তারা শোনে এবং একতরফা সিদ্ধান্ত যদি নেয়, তাহলে কিন্তু বাংলাজুড়ে আন্দোলন চলবে। দেশজুড়ে চলবে। বাংলার পানি বিক্রি করে দেওয়ার মানে হলো, আগামী দিনে গঙ্গার ভাঙন আরও বাড়বে। মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে পানির নিচে তলিয়ে যাবে। লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা গঙ্গার তলায় চলে যাবে।
মমতা আরও বলেন, ১৪টি বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি করেছে সিকিম। তখন কেন দেখেনি? আর এখন বলছে সব জল দিয়ে দাও। আমার দিতে আপত্তি নেই, কিন্তু আমার থাকলে তো দেব। আমি বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব বাংলাকে বেচে দেওয়ার স্বার্থে নয়।
আত্রাই নদী নিয়ে তিনি বলেন, আত্রাই নদীর পানি বাংলার বালুরঘাটের মানুষ পেত। দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ পেত। এখন পায় না। বাংলাদেশ, চীনের মাধ্যমে দিয়ে বাঁধ দিয়ে টোটাল পানিটাই আমাদের বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বারবার চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছি যে, আত্রাইয়ের পানি বাংলায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এরপরও কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্ব দেয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিকিম তিস্তায় ১৪টি বাঁধ দিয়ে যখন জলবিদ্যুৎ করল, তখন চোখে দেখেনি। এখন আমাকে না জানিয়ে সব ঠিক করে ফেলছে। ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন হচ্ছে, অথচ আমাদের জানাল না! ভাবছে এভাবে পার পেয়ে যাবে। আমরা হতে দেব না।
গত ২১ জুন দিল্লির হায়দরাবাদ ভবনে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে ওঠে পানিবণ্টন ইস্যু। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেই ওঠে তিস্তা প্রসঙ্গ। তা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, পানিবণ্টনে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ কারণে একটি দল যাচ্ছে বাংলাদেশে। পাশাপাশি রাজশাহীতে সহকারী হাইকমিশন থাকার পরও রংপুরে সহকারী হাইকমিশন স্থাপন করতে যাচ্ছে ভারত।
এ নিয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তা চুক্তি এবার হবেই। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী, তা এবার মমতাকে বাদ দিয়েই হবে। ভারতের সংবিধানে অনেক ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা রয়েছে যে, দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার অনেকটাই এগোতে পারে।
গঙ্গা চুক্তির বিষয়ে দিল্লির ইন্ডিয়ান প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলছেন, জ্যোতি বসুর সরকার যখন গঙ্গা চুক্তি করেছিল, তখনো মমতা কিন্তু আপত্তি তুলেছিলেন। তবে আমার মনে হয় না গঙ্গা চুক্তিতে মমতার আপত্তি থাকবে। কারণ এটি নতুন কোনো চুক্তি নয়, নবায়ন হবে। একবার কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়ে গেলে, তা বাতিল করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক পুরোনো চুক্তি নবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগে না বলেই আমি জানি।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৪:৪৮ ১১ বার পঠিত