নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নদী রক্ষায় বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হব।
প্রতিমন্ত্রী আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘জাতীয় নদী কনফারেন্স-২০২৪’ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী রক্ষায় দখল, দূষণরোধ, অবৈধ বালু উত্তোলন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নদী রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যে কোন প্রয়োজনে সহায়তা করবে।
নদী রক্ষায় সরকার সহায়তা করবে বলে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. শরীফ উদ্দিন, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন, রিভারাইন পিপল এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান মো. এজাজ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন, লেখক ও সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, নদী সংগঠক জুলিয়েট কেয়া মালাকার, রণজিত দত্ত, আলিউর রহমান, নূর আলম শেখ, পল্টন হাজং, এস এম মিজানুর রহমান, খাইরুল ইসলাম ও তোফাজ্জল হোসেন সোহেল।
‘নদী বাঁচাই, দেশ বাঁচাই’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় নদী সম্মেলন ২০২৪ আজ শেষ হয়েছে। এএলআরডি, বেলা, ওয়াটার রাইটস ফোরাম, রিভারাইন পিপল ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের সম্মেলন প্রমাণ করে যে- নদীকে নিয়ে আমরা কত ভাবি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে, নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে সময় বঙ্গবন্ধু বিআইডব্লিউটিএর জন্য সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন।
খালিদ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের দেহে শিরা-উপশিরা দিয়ে যেভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়, বাংলাদেশের নদীগুলো আমাদের সে রকম শিরা-উপশিরা। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ থেমে যাবে।
নদীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে রক্ষা করার কথা বলেছেন। এর আগে কোন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এমন কথা বলেছেন- তার প্রমাণ নেই। আজকে সরকার প্রধান ‘নদীকে রক্ষা করতে হবে’- এ ধরনের কথা বলেন বলেই, যারা নদী নিয়ে ভাবেন, নদীর কথা বলেন, তাদের কাছে সেটি শক্তি হিসেবে দাঁড়ায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন সমীক্ষা করেছে, দখলদারদের তালিকা করেছে। এসব জায়গায় ভুল থাকতে পারে, তবে যাত্রা শুরু হয়েছে।
খালিদ আরো বলেন, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিতে পারে, সে দেশের মানুষ সোনার বাংলা তৈরি করতে পারবে না- সেটা আমার বিশ্বাস হয় না। সে দেশের মানুষ নদীকে হত্যা করতে পারে, দখল করতে পারে- সেটি বিশ্বাস করা যায় না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীকে ঘিরে সভ্যতা গড়ে উঠেছে- এটা সত্য। নদীর পাড়ে শিল্প-কারখানা হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে, কিন্তু সেগুলো হবে নদীকে রক্ষা করে, ধ্বংস করে নয়। ২০১৯ সালে ঢাকা শহরের চারপাশে নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় অনেক ধরনের শক্তিশালী লোক ছিল। আমি সংসদে বলেছি, সরকার বা রাষ্ট্রের চেয়ে কেউ শক্তিশালী নেই। নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সরকার ও রাষ্ট্রের আন্তরিকতা আছে।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে সেই সময় বলেন, তুমি চোখ বুজে কাজ কর। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কর এবং নদীর প্রাণ প্রবাহ ফিরিয়ে আন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন ‘কোন হাইড্রোগ্রাফি জরিপ ছাড়া বালুমহাল ইজারা দেওয়া যাবে না। একই জায়গায় বার বার বালু উত্তোলন করা যাবে না। আমরা প্রতিবছর নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে থাকি। কেউ কেউ বলেছেন- নদী দখল করার সময় বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সবাই একসাথে থাকে। এরা রাজনৈতিক শক্তি নয়, এরা অপরাধী। এই জায়গায় সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে।
সরকার দশ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে-উল্লেখ করে খালিদ মাহমদুদ চৌধুরী বলেন, বিআইডব্লিউটিএ নিরলসভাবে কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএর ৪৫টি ড্রেজার রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৪০ ভাগ সরকারি, বাকি ৬০ ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খনন করা যাবে। সরকারের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে আমাদের ১৫০টি সরকারি ড্রেজার প্রয়োজন। রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিং হয়েছে। সিলটেশন হয়েছে। ১০ নম্বর বিপদ সংকেত আছে, এতে আরো সিলটেশন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৫:১৫ ৩৮ বার পঠিত