শাহরুখ খান। বলিউডের সবচেয়ে সফল তারকাদের অন্যতম। তিনি বলিউডের বেতাজ বাদশা। ৫৮ বছর বয়সেও তার কারিশমায় মুগ্ধ আট থেকে আশি। তবে ব্যর্থতা, প্রত্যাখ্যান তাকেও পদে পদে সইতে হয়েছিল। সে গল্প হয়তো অনেকেরই অজানা। বলিউডের নামকরা পরিচালক অডিশন নিয়েও সিনেমা থেকে অবলীলায় ছেঁটে ফেলেছিলেন কিং খানকে। জানেন সেই গল্প।
নয়াদিল্লির এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটির ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। সময়টা ১৯৮৫ সাল। দিল্লির থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে নিয়মিত নাট্যচর্চা শুরু করেন শাহরুখ খান। সেসময় তিনি সান্নিধ্যে আসেন বিখ্যাত অভিনেতা ব্যারি জোনসের। বাড়তে থাকে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন মাসকমিউনিকেশনে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ না করেই গেলেন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে।
এরইমধ্যে টিভি ধারাবাহিক ‘ফৌজি’র অফার আসে শাহরুখ খানের কাছে। সেসময় তিনি আরও বেশ কিছু ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। কিন্তু মূল ধারার বলিউড সিনেমাতে কাজের অফার কিছুতেই পাচ্ছিলেন না। এমন সময় শাহরুখের পরিচয় হয় অভিনেতা বিবেক ভাসবানীর সঙ্গে। বিবেক সে সময় বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করেছেন। কিন্তু শাহরুখের কাছে থাকার মতো ছাদও নেই। তিনি থাকতে শুরু করেন বিবেকের সঙ্গে।
এদিকে বলিউডে তখন অনিল কাপুরের রাজত্ব চলছে। বিবেকই তাকে পরিচয় করিয়ে দেন অনিল কাপুরের সঙ্গে। রাখঢাক না করেই শাহরুখ জানান, যেকোনো সিনেমায় সাইড রোল পেলেও তিনি করতে রাজি। শাহরুখকে বেশ মনে ধরে অনিলের। তিনি আশ্বস্ত করেন, কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করবেন।
সালটা ১৯৯০। সেসময় শুরু হয়েছে ‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরি’ সিনেমার শুটিং। পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। মুখ্য ভূমিকায় অনিল কাপুর ও মনীষা কৈরালা। ওই সিনেমায় সাইড রোলের জন্য এক অভিনেতার প্রয়োজন ছিল। অনিল সুপারিশ করেন শাহরুখের নাম। অভিনেতার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, পরিচালক বিধুবিনোদ চোপড়া তার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানাবেন। ডাকা হয় শাহরুখকে। শুরু হয় অডিশন। সামনে বসে বিধুবিনোদ চোপড়া। নিজের সবটা দিয়ে অডিশন দেন শাহরুখ।
কিন্তু হায়, বিধুর মনে ধরে না শাহরুখের অভিনয়। বাদ পড়েন তিনি। বিধুর বক্তব্য ছিল, ওই চরিত্রের জন্য তিনি একজন মধ্যবয়স্ক, ম্যাচিউরড অভিনেতা খুঁজছেন। শাহরুখের পক্ষে সেই চরিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভবই নয় বলে মনে করেছিলেন বিধু। ওই চরিত্রে শাহরুখের বদলে নেওয়া হয় রঘুবীর যাদবকে।
পিছিয়ে যায় শাহরুখের সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্ন। তবে ওই সিনেমাতে নির্বাচিত না হয়ে একদিকে শাপে বরই হয়েছিল শাহরুখের জন্য। ভাবছেন তো কী করে? সাইড রোল দিয়ে নিজের ফিল্মি ক্যারিয়ার শুরু করলে শাহরুখের হয়তো কোনোদিনই নায়ক হওয়া হতো না। নাম তিনি হয়তো করতেন ঠিকই, কিন্তু নায়ক হওয়ার স্বপ্ন তার অধরাই থেকে যেত।
‘হার কর জিতনে ওয়ালোকো বাজিগর কেহতে হ্যায়’, প্রথম ব্লকবাস্টার ‘বাজিগর’ সিনেমায় শাহরুখ খানই বলেছিলেন সে কথা। তার জীবনটাও অনেকটা সে রকমই। হেরেছেন, ভেঙেছে স্বপ্ন। কিন্তু পালিয়ে যাননি। বলিউডপাড়ার মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। আজ তিনি মেগাস্টার। ভক্তদের কাছে ‘দ্য কিং খান’।
শাহরুখ খানের সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত তিন সিনেমা ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ এবং ন‘ডাঙ্কি’র মধ্যে দুটিই গত বছর হাজার কোটি টাকার উপরে ব্যবসা করেছে। এছাড়া বর্তমানে তিনি ব্যস্ত আইপিএল নিয়ে। ক্রিকেটের এই ঘরোয়া আসরে তার টিম কলকাতা নাইট রাইডার্স ফাইনালে উঠেছে। আগামী রবিবার রাজস্থান রয়েলসের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচ খেলবে কলকাতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৬:৩৯ ৪১ বার পঠিত