সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নাকি ৯০ মিনিট অনেক দীর্ঘ সময়। এতোটা দীর্ঘ সময় যে, রিয়াল মাদ্রিদ দারুণ সব প্রত্যাবর্তনের গল্প জন্ম দিয়ে ফেলে। এই তো গতরাতেই বায়ার্ন মিউনিখ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পা দিয়েই ফেলেছিল। রিয়ালের মাঠে তাদের বিপক্ষেই ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে সফরকারী বায়ার্ন । কিন্তু আরও একবার প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে মাত্র ৩ মিনিট সময়ই যথেষ্ট হলো মাদ্রিদের জন্য। বদলি নামা হোসেলুর গোলে জয় ছিনিয়ে ফাইনালে উঠেছে লস ব্লাঙ্কোরা।
বুধবার (৮ মে) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে হোসেলুর জোড়া গোলে জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই জয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের অ্যাগ্রিগেটে ফাইনালে উঠেছে রিয়াল। ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ১৫তম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে লড়বে তারা।
বায়ার্নের মাঠ থেকে আগের লেগে ২-২ গোলে ড্র করে ফিরেছিল রিয়াল। ঘরের মাঠে তাই যে কোনো ব্যবধানের জয় পেলেই চলত রিয়ালের। সে কারণে ওভার অ্যান্ড আউট আক্রমণে ওঠেনি রিয়াল। অভিজ্ঞ কোচ আনচেলত্তি কৌশলদীপ্ত ফুটবলে নিয়েছে হিসেবি ঝুঁকি। যা টমাস টুখেলের কৌশলকে টেক্কা দিতে সাহায্য করেছে রিয়ালকে।
ক্রুস-মেন্ডি জায়গা বদলে ফাঁকা জায়গা তৈরি করা: মাদ্রিদ শুরু থেকেই প্রেসিং করে খেলার চেষ্টা করেছে। লেফটব্যাক ফারলান্দ মেন্ডি প্রায়ই ওভারল্যাপ করে উপরে উঠছিলেন। অন্যদিকে টনি ক্রুস ডিফেন্সে ফাঁকা হওয়া জায়গা পূরণে নিচে নেমে যাচ্ছিলেন। বায়ার্নের রক্ষণে ফাঁকা জায়গা তৈরি করতে আনচেলত্তি সহজ পথেই হেঁটেছেন। ভিনিসিউস সেন্টার থেকে ক্রমেই প্রান্তের দিকে সরে যাচ্ছিলেন। আর কিছুটা নিচে নেমে যাচ্ছিলেন বেলিংহ্যাম। ফলে বায়ার্নের ডান দিকটা ওভারলোড হয়ে যায়।
ফাঁকা কাজে লাগিয়ে কার্ভাহালের আক্রমণে ওঠা: ফলে বাঁ দিকটা ফাঁকা হয়ে যায়। আর ক্রুস তার পাস খেলার ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ শুরু করেন। সামনের ফাঁকা জায়গা কাজে লাগিয়ে শর্ট পাসে বেলিংহ্যাম-ভিনিকে যেমন খুঁজে নিচ্ছিলেন, তেমনই লং বলে দানি কার্ভাহালকেও। ডানদিকে ভিড় করা রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মার্ক করতে গিয়ে বাঁয়ে থাকা কার্ভাহালকে ফাঁকা জায়গা দিয়ে দেয় বায়ার্ন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রুস তাকে লং বল বাড়াতে থাকেন। এই কৌশলে শুরুর দিকেই গোল পেয়ে যেতে পারতো রিয়াল। কিন্তু রদ্রিগো সহজ সুযোগ নষ্ট করেন।
কেন-সানে জুটিকে নিষ্ক্রিয় করা: এর জবাব হিসেবে বায়ার্ন লেরয় সানেকে মুভ করিয়ে ক্রুসের পাসিং জোন ন্যারো করে আনার চেষ্টা করে। এর জন্য তারা অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণাত্মক মেন্ডিকে ফাঁকা করে দেয়।
রিয়ালের ফুলব্যাক ওভারল্যাপ করায় দুই উইংয়ে ফাঁকা জায়গা পায় বায়ার্ন। সেটা কাজে লাগাতে লেরয় সানে ও আলফনসো ডেভিস ওপরে উঠে আসেন। আর ডিপে নেমে এসে প্লেমেকিংয়ের দায়িত্ব নেন হ্যারি কেন। কিন্তু এই প্ল্যান ব্যার্থ হয়। ক্রুস দারুণভাবে রক্ষণাত্মক ভূমিকা পালন করে সানেকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেন। কেনও আশানুরূপ পাস দিতে ব্যর্থ হন।
তবে একটা সুযোগই যথেষ্ট ছিল ডেভিসের জন্য। কেনের একটা দারুণ পাস ধরে গোল আদায় করে নেন এই উইংব্যাক।
অব দ্য বল মুভমেন্টে প্রেস করে যাওয়া: গোটা ম্যাচে অফ দ্য বল মুভমেন্ট দারুণ ছিল রিয়ালের। ক্রুস-চুয়েমিনির ডাবল পিভট ব্যবহার করে বায়ার্নের সেন্ট্রাল ডিফেন্সকে চাপে রেখেছেন। ভিনি এবং বেলিংহ্যাম পাহারায়ে ছিল লেফট ফ্ল্যাংকে। রড্রিগো এবং ভালভার্দে ডানদিকে মুভ করেছিল, এবং ডায়ারের উইক ফুট টার্গেট করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নয়্যার থেকে ডায়ারের কাছে পাস এসেছে এবং ভালভার্দে ও রড্রিগোর ডাবল প্রেসিংয়ে বায়ার্ন বল হারিয়েছে।
ভিনিসিউসের আক্রমণের ঝড়: এই ম্যাচে রিয়ালের আক্রমণের পুরোটা জুড়েই ছিলেন ভিনিসিউস জুনিয়র। প্রথমার্ধেই নাচাচ্ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মেন্ডি নিচে নেমে যাওয়ার পর বাড়তি জায়গা পেয়ে তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন ভিনি। বায়ার্নের রক্ষণভাগ অন্তত কিছুদিন দুঃস্বপ্নে ভিনিকে নিয়মিত দেখবেন।
খেলোয়াড় বদল: ম্যাচে রিয়ালকে বড় এডভান্টেজ দিয়েছে আনচেলত্তির সঠিক সময়ে সঠিক খেলোয়াড় বদলি। পিছিয়ে থাকার সময় মদ্রিচ ও কামাভিঙ্গা নেমে মাঝমাঠের দখল নিয়েছেন। রিয়ালের মৃতপ্রায় ডানদিক থেকে ব্রাহিম দিয়াজ বেশ কিছু দারুণ আক্রমণ চালিয়েছেন। আর শেষ পর্যন্ত রাতটা নিজের করে নিয়েছেন হোসেলু। ধারে খেলতে আসা এই খেলোয়াড় বদলি নেমে তিন মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল করে দলকে নিয়েছেন ফাইনালে।
অন্যদিকে টুখেল খেলোয়াড় পরিবর্তনে দিয়েছেন বোকামির পরিচয়। মাত্র ১ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা না করে উল্টো আক্রমণের অস্ত্রগুলো একে একে তুলে নিয়েছেন। কেন, মুসিয়ালা এবং সানেকে তুলে বাস পার্কিং কৌশল নেয়াটা বড় ভুল ছিল টুখেলের। যার খেসারত দিয়েছেন ম্যাচ হেরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৫:৫৭ ২৩ বার পঠিত