কোনো কারখানায় ১৫ শতাংশ শ্রমিক সম্মতি দিলেই সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে বিধান রেখে শ্রম আইন সংশোধন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন তথ্য জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আমরা কোনো দরকষাকষির মধ্যে নেই। দেখেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সারা বিশ্বের শ্রমিকদের একটি সংগঠন। এখানে সবসময় শ্রমিকদের অধিকার যাতে রক্ষা হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এটা নিয়ে সবসময় তাদের বক্তব্য থাকে, তাদের সাথে আমরা এখন বসেছি।
‘আমরা আমাদের শ্রম আইন সংশোধন করেছি। এটা গত পার্লামেন্টে সংশোধিত হয়েছিল, পরে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিল। আইনটিতে কিছ ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় পরে ফেরত আনা হয়,’ যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আইনটি যখন প্রণয়ন করা হয়, তখন সারা বিশ্বের সর্বোচ্চ চর্চা হওয়া আইনের ধারা এখানে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি। এই চেষ্টায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার একটা অবদান আছে।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে কিছু দেশ ২০১৯ সালে নালিশ করেছিল। সেই নালিশের পরে আমরা বহুবার আইএলও’র পরিচালনা পর্ষদকে বলেছি, শ্রমিকদের অধিকার আমাদের দেশে কেবল রক্ষাই হয়নি, শ্রমিকদের অধিকার আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বিরুদ্ধে অহেতুক যে নালিশ করা হয়েছে, সেটা শেষ হওয়া উচিত।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রম আইন নিয়ে কথা বলার জন্য তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রম আইনটিকে সংশোধন করছি, যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অংশীজন আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা আছে যারা শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে, তাদের কথা শুনবো। কারণ, আমরা দেখবো, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুযায়ী যে শ্রমিক অধিকার রক্ষা করা হয়, তার সঙ্গে অংশীজনদের পরামর্শের কোনো পার্থক্য আছে কিনা।
তিনি বলেন, আমরা কোনো মৌলিক পার্থক্য খুঁজে পাইনি। কিন্তু আমরা এই অধিকার যাতে রক্ষা হয়, সেই চেষ্টা সবসময় করবো। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য যার যার কথা শোনার, সেটা আমরা শুনবো। তারা সেটা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটিতে তুলে ধরবেন। আগামী ১২ মে আইনটি সম্পূর্ণ করার জন্য একটি সভার আয়োজন করবো।
আইএলওর পরামর্শ কী ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছে, তা সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে থ্রেশহোল্ড (ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের সম্মতির হার) কমিয়ে আনা। আমরা আগে এই থ্রেশহোল্ড ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু সেটা যেই কারখানায় তিন হাজার বা তার চেয়ে বেশি শ্রমিক আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সব কারখানার জন্য এই ১৫ শতাংশ থ্রেশহোল্ড রাখা হয়েছে।’
‘অর্থাৎ ১৫ শতাংশ শ্রমিকরা রাজি হলেই তারা একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। আইএলওর এই পরামর্শ মেনে নিয়ে তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই থ্রেশহোল্ড দশ শতাংশে নিয়ে আসা, সেটা আমরা ধীরে ধীরে করবো,’ বলেন আনিসুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০২:২২ ১৮ বার পঠিত