আজ মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায় আজ ঈদ উদযাপন করছেন।
মঙ্গলবার দেশের কোথাও ১৪৪৫ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন বুধবার বাসস’কে জানান, নিয়ম অনুযায়ী ২৯ রমজানে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। কিন্তু এদিন চাঁদ দেখা না গেলে রোজা ৩০টি পালন করতে হয় এবং ৩০ রোজার পরদিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। এই জন্য আর চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকের প্রয়োজন হয় না বলে তিনি জানান।
আজ সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পুরো এক মাস রোজা পালন করে জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
রাজধানীতে বিভিন্নস্থানে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু করে মুসল্লীরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আজ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায়।
ঈদের প্রধান জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি সকলকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ঈদের প্রধান জমাতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
ঈদের প্রধান জামাতে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। ২৫ হাজার ৪শ’ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসাথে এবার ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে নির্বিঘœ চলাচল ও সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ,মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকবৃন্দ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বুধবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোষ্টে প্রদর্শন করা হয়। ঈদুল ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবনসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা সজ্জিত করা হয়।
সারাদেশে বিভাগ বা জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচী প্রনয়ণ করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুঃস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়,এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদের প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। ইমামতি করেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জাতীয় সংসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল ফিতর এর জামায়াত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ, হুইপবৃন্দ,মন্ত্রিপরিষদের সদস্য,সংসদ-সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মুসল্লীরা এই জামায়াতে অংশ নেন। জামায়াত সবার জন্য উন্মুক্ত। জামায়াতে আগ্রহী মুসল্লীদেরকে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে আগেই অনুরোধ জানানো হয়।
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। জামাত নির্বিঘœ করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
মুসল্লিদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। মাঠে একসঙ্গে তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। বিকল্প ইমাম হিসেবে ছিলেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৯:১০ ২১ বার পঠিত