টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের তাগিদ

প্রথম পাতা » অর্থনীতি » টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের তাগিদ
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪



টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের তাগিদ

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং এবং ডিসক্লোজারসঃ রেগুলেটরি রিকুয়ারমেন্টস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তার আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়। একটি সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানির অবস্থা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে। কারণ এর মধ্যে কমপ্লায়েন্স, গভর্নেন্স, সঠিক আর্থিক অবস্থাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক কিছু থাকে। আর্থিক প্রতিবেদন শুধু বিনিয়োগকারী নয়, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রয়োজন।

এছাড়াও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রয়োজন জানিয়ে ডিএসইর এমডি বলেন, ‘একটি দক্ষ পুঁজিবাজারের অন্যতম শর্ত হলো তথ্যসমূহ পরিপূর্ণভাবে সময়মত প্রকাশ করা। দক্ষ পুঁজিবাজার করতে হলে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা এবং এটি সময়মতো দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ খুবই জরুরি। এজন্য ডিএসই ধাপে ধাপে সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এ ধরনের প্রোগ্রামের আয়োজন করবে।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘তালিকাভুক্তির পর দেখা যায়, অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। তাহলে কোম্পানিটি যখন আইপিওর কাগজপত্র জমা দিয়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জিত করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা যারা এই কাজ করি, তারা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি, এ দেশের নাগরিক হিসেবে, দেশের মানুষকে ঠকানোর জন্য এ কাজ করতে পারি না‌। আমরা সঠিক তথ্য দেব; সেটা আমাদের দায়িত্ব।’

আর্থিক প্রতিবেদনের অস্বচ্ছতা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আপনাদেরকে ভয়-ভীতি দেখাই, হেয়ারিংয়ে এ নিয়ে আসি এবং জরিমানা করি, যাতে আপনারা ঠিক হন। কিন্তু এরপরও আমরা দেখেছি অনেকের বোর্ডে সমস্যা রয়েছে, ঠিকমতো আর্থিক তথ্য প্রকাশ করে না। অন্যান্য কাজ ঠিকমতো করে না। আবার সেগুলো নিয়ে জালিয়াতি করে। এগুলো সাধারণ নিয়মিত কাজ। কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের কাছে আসেন। আমরা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করবো।’

বিভিন্ন বিধিবিধান সম্পর্কে অধ্যয়ন না করার কারণে অনেকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিপালন করতে পারেন না উল্লেখ করেন বিএসইসি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা কোম্পানির সচিব রয়েছি এবং সিএফও রয়েছি তাদের উচিত বিধি-বিধানগুলো সঠিকভাবে পড়া এবং সেগুলো যথাযথ পালন করা। যদি কোথাও সমস্যা মনে হয় তাহলে আপনারা ডিএসইর মাধ্যমে জানাবেন বা কমিশনকে জানালে আমরা অবশ্যই সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ডিএসইর পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট এবং ডিসক্লোজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মালিক, বিনিয়োগকারী এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর জন্য। কারণ এটার সঙ্গে বড় একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট হচ্ছে মূলত চার্টার্ড একাউন্টদের, যেটাতে নিরীক্ষক প্রতিবেদন থাকে এবং সেটার সঙ্গে কিছু সংযুক্ত তথ্য থাকে। এটার সঙ্গে বিস্তারিত তথ্যসহ একটি ফুল ডিসক্লোজ থাকবে। যেটার মাধ্যমে একেবারে সাধারণ যে মানুষও আর্থিক প্রতিবেদনটা বুঝতে পারবে সেভাবে প্রকাশ করতে হবে। এটা হচ্ছে ফিনাসিয়াল রিপোর্টিং এর মূল কথা।

তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এটা আরও বিস্তারিত প্রকাশ করতে হয় জানিয়ে আফজাল হোসেন বলেন, সেক্ষেত্রে ফুল ডিসক্লোজার থেকেও আরও বেশি তথ্য এবং এনালাইসিস সহকারে প্রকাশ করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশনগুলো ডিসক্লোজারের একটি অংশ। তাই আর্থিক প্রতিবেদনগুলো সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রকাশ করা দরকার।
আরও পড়ুন: মার্জিন ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার সময় বাড়াল বিএসইসি

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মূলত আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। আর এজন্য দুটি পক্ষের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটি হলো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও আরেকটি হলো চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আর ভবিষ্যতে আমাদের এ ধরনের সেমিনার আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা প্রয়োজন। এছাড়াও অতীতের সমস্যা কাটিয়ে একটি টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির প্রধান হিসাবরক্ষক এবং নির্বাহী পরিচালক কামরুল আনাম খান, ডিএসইর প্রধান রেগুলেট রি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ, ডিএসইর কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান মো. মাসুদ খান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১৮:৪৩   ২৫ বার পঠিত  




অর্থনীতি’র আরও খবর


ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে সুবাতাস
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার জন্য রেগুলেটরদের দায়ী করলেন অর্থ উপদেষ্টা
কর ছাড়ের সুবিধা প্রসঙ্গে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা
বাতিল হচ্ছে ৫৭ লাখ টিসিবি কার্ড, জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
নতুন সূচক যুক্ত করে মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে অর্থনৈতিক শুমারি



আর্কাইভ