প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংশ্লিষ্ট সকলকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছেন।
আজ রাজধানীর শের-এ-বাংলার এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বর্তমান সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২য় সভা এবং চলতি অর্থবছরের (২০১৮) অষ্টম একনেক সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর সুবিধা বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হওয়ার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। এটি কোন নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সার্বিক সমস্যা। এলডিসি থেকে উত্তরণে কিছু সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য রাখেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট ৮,৪২৫.৫১ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। “মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭,৯৩৯.৮৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আসবে এবং বাকি ৪৮৫.৬৪ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসাবে আসবে।”
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিশরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম কক্ষ রাখার এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিষেবা পান সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বুথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে- প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের সময় বন্যার বিষয়টি বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (তৃতীয় পর্যায়) নির্মাণের জন্য ৩,০৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বাকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলির নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেন- যাতে করে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
ফলে পরিকল্পনা কমিশন ওইসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেয়।
মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব না চাইলেও মাঝে মাঝে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিলম্ব হয়।
তিনি আরও বলেন, “উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।”
একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আরও জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৩০টি ক্ষুদ্র প্রকল্পের অনুমোদনের বিষয়ে দিনের একনেক সভায় অবহিত করা হয়।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলি হল : অতিরিক্ত ২৮৮.০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত), ৪৮১.৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি সীমান্ত জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন, ৩৭১.৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি মৎস্য খামারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), ২৩২.৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের উন্নয়ন, অতিরিক্ত ১৬৬.৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো, উন্নত দক্ষতা ও তথ্যের প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার সামর্থ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ১,০৪৪.৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত)।
সভায় কোনো খরচ না বাড়িয়ে বাংলাদেশ বেতার, শাহবাগ কমপ্লেক্স, আগারগাঁও, ঢাকা, ১ম পর্যায়, ৩য় সংশোধিত স্থানান্তর, নির্মাণ ও আধুনিকীকরণের জন্য প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৪:০৩ ২৬ বার পঠিত