হ্যারি কেনের দুই অর্ধের দুই গোলে ল্যাজিওকে শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বায়ার্ন মিউনিখ।
প্রথম লেগে ল্যাজিওর মাঠে ১-০ গোলের হারের পর কাল শুরু থেকেই বায়ার্নকে আগ্রাসী মনে হয়েছে।৩৮ মিনিটে কেন বায়ার্নকে সমতায় ফেরান। পাঁচ বছরে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে গোল পেয়েছেন কেন। বিরতির আগে দারুন এক হেডে থমাস মুলার ব্যবধান দ্বিগুন করেছেন। ৬৬ মিনিটে কেন দ্বিতীয় গোল করলে বায়ার্নের পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত হয়।
ম্যাচ শেষে এ্যামাজন প্রাইমে কেন বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি নিখুঁত রাত ছিল। প্রত্যেকের মধ্যে একটি জেদ কাজ করেছে। আজ আমরা যেভাবে খেলেছি ও সুযোগ তৈরী করেছি, বল নিয়ে আগ্রাসন দেখিয়েছি তাতে এই জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। এবারের মৌসুমে বায়ার্নের এটি অন্যতম দাপুটে জয়।’
বিদায়ী কোচ থমাস টাচেলের জন্য এটি একটি স্বস্তির জয় ছিল। অন্তত এপ্রিলে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত টাচেল দলকে নিয়ে বাড়তি এক আত্মবিশ^াসে থাকবেন। এবারের মৌসুমে এই একটি শিরোপাই এখন পর্যন্ত বায়ার্নের সামনে টিকে আছে।
২০২১ সালে চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ী টাচেল বলেছেন, ‘ইউরোপে এটাই সবচয়ে কঠিন ট্রফি, সম্ভবত পুরো বিশে^রও। কিন্তু শুরু থেকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে খুব বেশী কঠিন হওয়ার কথা নয়।’
কেন স্বীকার করেছেন টাচেলের বিদায় অনেকটাই অস্বাভাবিক ভাবে হচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচের পর মৌসুমে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হতে পারে। এখন শুধু প্রয়োজন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
দুইবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী মুলার বলেছেন, ‘আমরা একটি বিষয় নিশ্চিত করতে চাই এই অনুভূতি যাতে সবাই উপভোগ করে। আগামীকাল পত্রিকার হেডলাইন যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তটাকে আমরা উপভোগ করতে চাই। আমরা খুবই খুশী কারন সামনে এগিয়ে যাবার গুরত্বটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি।’
এই পরাজয়ে ল্যাজিও ১৯৯৯-২০০০ সালের পর প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা মিস করলো।
ছয়বারের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন শেষ ষোল থেকে বিদায়ের শঙ্কা নিয়ে কাল মিউনিখে ঘরের মাঠে ম্যাচ শুরু করেছিল। গত ১৩ মৌসুমে মাত্র একবারই নক আউট পর্বের প্রথম রাউন্ডেই বায়ার্নকে বিদায় নিতে হয়েছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতা টানা তিন পরাজয়ে ২০১৫ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্নকে সবচেয়ে বাজে পারফরমেন্সের লজ্জায় পড়তে হচ্ছিল। এর মধ্য রোমে প্রথম লেগের ১-০ গোলের পরাজয় ছিল সবচেয়ে হতাশার। এই জয়ে অন্তত গ্রীষ্ম পর্যন্ত বায়ার্নের হটসিটে টাচেলের নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। গতকাল অবশ্য টাচেল নিজেই আরো এগিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কালকের ম্যাচে মূল একাদশে বড় অর্থের চুক্তির বিনিময়ে দলে আনা দক্ষিন কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম মান-জায়ের পরিবর্তে এরিক ডায়ারকে সুযোগ দিয়েছিলেন টাচেল। জসুয়া কিমিচকে মধ্যমাঠ থেকে সড়িয়ে রাইট-ব্যাক পজিশনে খেলিয়েছেন। সানে ও জামাল মুসিয়ালা শুরুতেই ল্যাজিওকে বিপদে ফেলেছিল। প্রথম লেগের একমাত্র গোলদাতা সিরো ইমোবিলে ৩৬ মিনিটে মাথিয়াস ডি লিটের ভুলে ল্যাজিওর লিড বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার হেড অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। এই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে ল্যাজিওকে। দুই মিনিট পর রাফায়েল গুয়েরেইরোর পাসে কেন বায়ার্নকে স্বস্তির গোল উপহার দেন। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে মুলার ব্যবধান দ্বিগুন করলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন।
টটেনহ্যাম থেকে আসার পর থেকেই কেন বায়ার্নের হয়ে নিজেকে প্রমান করেছেন। কিন্তু তারপরও জার্মান গণমাধ্যম প্রায়ই কেনকে বায়ার্নের জন্য অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করেছে। ২০১২ সালের পর বড় কোন শিরোপা না পাওয়া বায়ার্নের জন্য কেন আদৌ এই তকমার জেড় কাটাতে পারেন কিনা তা সময়ই বলে দিবে। ৬৬ মিনিটে ইংলিশ অধিনায়ক বায়ার্নের ইউরোপে থাকা নিশ্চিত করেছেন। সানের শট ল্যাজিও গোলরক্ষক ইভান প্রোভিডেল রুখে দিলে পোস্টের খুব কাছ থেকে কেন বল জালে জড়ান। এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৩৩ ম্যাচে এটি কেনের ৩৩তম গোল।
৬১ মিনিটে হাঁটুর ইনজুরির কারনে ল্যাজিও স্ট্রাইকার ইমোবিলেকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। ম্যাচের শেষ ভাগ পর্যন্ত তাই ল্যাজিওকে খুব একটা আক্রমন করতে দেখা যায়নি।
গত আট ম্যাচে এই প্রথম বায়ার্ন কোন গোল হজম না করে ম্যাচ শেষ করেছে। অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তী ইকার ক্যাসিয়াসের ৫৭ ম্যাচে গোল হজম না করার রেকর্ড স্পর্শ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২১:১০ ২৫ বার পঠিত