মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত। তাই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এই বাহিনীর সদস্যদের সেই সময় কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত তাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার পরামর্শ দিয়ে তারা বলছেন, বাংলাদেশ চাইলে অনুপ্রবেশের দায়ে মিয়ানমারের এসব নাগরিককে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বিজিপি সদস্যসহ মিয়ানমারের অন্তত ৩৫০ জন নাগরিক। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত বাহিনী এই বিজিপি সদস্যরাও ২০১৭ সালের আগস্টে নিজ দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। ফলে বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে লাখ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিক রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি এবার দেশটির বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশকে কীভাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশে আসা বিজিপি সদস্যদের মধ্যে কেউ সেই সময়ের গণহত্যায় জড়িত ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখার বিষয়টি সামনে আসছে। অথবা ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে বিজিপির কোনো সদস্য এসেছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কতখানি জরুরি, এমন প্রশ্নে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ চাইলে বিজিপি এসব সদস্যদের অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত করতে পারে। খতিয়ে দেখতে পারে রোহিঙ্গা গণহত্যায় তাদের সংশ্লিষ্টতা। এসব বাহিনীর কেউ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করছে কি না- তা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। আর উপযুক্ত সময় সাপেক্ষে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, বিজিপিসহ রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার পরামর্শ তাদেরে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ সময় সংবাদকে বলেন,
যে বাহিনী নির্যাতন করেছে বা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যদেরকে আমরা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিচারের ব্যবস্থা করতে পারি। আর এই বিচারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুর সঙ্গে বিষয়টি ব্যবহার করতে পারি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবিক দিক বিবেচনায় প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যসহ মিয়ানমারে নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিলেও তাদের রাখতে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন,
দেশে আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যরা শুধু নজরদারিতে নয়, বাংলাদেশের হেফাজতেই আছে। তবে এটি সব সময় নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন। এখানে কোনো শিথিলতার সুযোগ নেই। এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিষয়টি খেয়াল লাখতে হবে।
সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে পেরে না উঠে বিওপি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন ৩৩০ মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনাবাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা। তারা এখন বান্দরবানের ঘুমধুম ও টেকনাফের হ্নীলাতে আশ্রয়ে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৪:০৭ ৩০ বার পঠিত