বরগুনায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সবুজ কুমার দাসকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার( ২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২ ও র্যাব-৯ এর যৌথ দল।
গ্রেপ্তার ডা. সবুজ কুমার প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি। তিনি বাগেরহাট কচুয়ার সনাতন দাসের ছেলে।
র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি খান আসিফ তপু জানান, গত ১৫ জানুয়ারি বরগুনা জেলার বামনা থানাধীন এলাকার সন্তানসম্ভবা এক নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে তার বাবা ও স্বামী তাকে বামনা থানাধীন ০৪ নং ডৌয়াতলা ইউনিয়নের ডৌয়াতলা সুন্দরবন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সবুজ কুমার দাস আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ প্রদান দেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমের বাবাকে ২০ হাজার টাকা দিলে তারা অভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে তার মেয়ের অপারেশন করবেন বলে জানান। এতে ভিকটিমের বাবা রাজি হয়ে ক্লিনিকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা জমা দিলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপারেশন থিয়েটার রুমে ভিকটিমকে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ক্লিনিকের কর্তব্যরত ডাক্তার সবুজ কুমার দাস অন্য কোন অভিজ্ঞ সার্জন ও স্টাফ ছাড়া তার অদক্ষ সহকর্মীদের নিয়ে অপারেশন শুরু করেন।
দীর্ঘ সময় পার হলেও অপারেশন থিয়েটার থেকে কোনো খবর না আসায় পরিবারের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে অপারেশন থিয়েটার খোলার জন্য বললেও অপারেশন চলছে বলে অপারেশন থিয়েটারের দরজা বন্ধ রাখেন তারা।
এভাবে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দরজা খোলার জন্য জোরালো দাবি জানালে ডা. সবুজ কুমার দাস ভিকটিমের বাচ্চাকে তার পেটের মধ্যে পুনরায় রেখে তার পেট বাহির থেকে সেলাই করে স্কচটেপ লাগিয়ে রাত ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করেন। রোগীর হার্টবিট বেড়ে গেছে এই অজুহাতে রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে বলে অভিযুক্ত ডা. সবুজ কুমার দাস রোগীর স্বজনদের জানান। তাদের কথামতো পূর্ব থেকে ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সযোগে বরিশাল নেওয়ার পথে ভান্ডারিয়া থানা এলাকায় পৌঁছালে দীর্ঘ সময় ভিকটিমের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনরা। পরে চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রসূতিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় মৃতের বাবা বাদী হয়ে বরগুনা জেলার বামনা থানায় ৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-২ ও র্যাব-৯ এর যৌথ দল গতকাল রাতে মামলার প্রধান আসামি ডা. সবুজ কুমার দাসকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তাকে বরগুনা জেলার বামনা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:৫৯ ৩০ বার পঠিত