বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাকে ৪-২ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগা টেবিলের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে জিরোনা। এই জয়ের পর জিরোনার আত্মবিশ্বাসী কোচ মাইকেল বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যেকোন প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতা তার দলের রয়েছে।
কাতালান প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে ক্লাব ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত লিগে হারানোর কৃতিত্ব দেখালো জিরোনা। এই জয়ে রিয়াল মাদ্রিদের থেকে দুই পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষস্থানে আসীন হলো জিরোনা। শনিবার রিয়াল বেটিসের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছে মাদ্রিদ।
তৃতীয় স্থানে থাকা এ্যাথেলেটিকো মাদ্রিদের সাথে সমান ৩৪ পয়েন্ট অর্জন করলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে বার্সেলোনা। জাভির দল জিরোনার থেকে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
ম্যাচের ১২ মিনিটে আরটেম ডোভিক জিরোনাকে এগিয়ে দিয়েছিল। রবার্ট লিওয়ানদোস্কির গোলে সমতায় ফিরে বার্সেলোনা। মিগুয়েল গুটিরেজ গোল করে সফরকারীদের আবারো এগিয়ে দেন। ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে ভালেরি ফার্নান্দেজ ব্যবধান দ্বিগুন করেন। ইনজুরি টাইমে ইকে গুনডোগানের গোলে লড়াইয়ে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয় বার্সেলোনা। অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ান স্টুয়ানি পোস্টের খুব কাছ থেকে বল জালে জড়িয়ে জিরোনার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলো।
ম্যাচ শেষে মাইকেল বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তগুলো বেশ উপভোগ করছি। এই মুহূর্তে দলের সবাই বেশ মানসিক ভাবে ইতিবাচক অবস্থানে আছে। আমি জানি না লা লিগা জয়ের মত আমাদের ক্ষমতা আদৌ আছে কিনা। কিন্তু আমরা যেকোন প্রতিপক্ষকে হারানোর যোগ্যতা রাখি।’
এই পরাজয় বার্সেলোনার শিরোপা ধরে রাখার পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। এ সম্পর্কে জাভি বলেছেন, ‘আজেকর ম্যাজে জয় জিরোনার প্রাপ্য ছিল। তাদের দলে বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। জিরোনা আমাদের থেকে ৭ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে। আমরা ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে এটাই আমাদের বাস্তবতা। দুই ধাপ এগিয়ে যাবার জন্য আমাদের এক ধাপ পিছনে যেতে হবে। যদিও এই কথা বলার জন্য অনেকেই হয়তো আমার সমালোচনা করবে।’
ইনজুরি আক্রান্ত মিডপিল্ডার ইয়ানগেল হেরেরাকে ছাড়াই কাল মাঠে নেমেছিল জিরোনা। ম্যানচেস্টার সিটি থেকে এবারের গ্রীষ্মে হেরেরাকে দলে ভিড়িয়েছে লা লিগার ক্লাবটি। এনিয়ে চতুর্থ মৌসুমে লা লিগায় খেলছে জিরোনা। কিন্তু কাতালান জায়ান্টদের বিপক্ষে খেলা দেখে মনেই হয়নি প্রতিপক্ষের সাথে তাদের কোন ধরনের পার্থক্য রয়েছে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান আধিপত্য ধরে রেখেছিল মাইকেল বাহিনী। ২৭ বারের লিগ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। ১২ মিনিটে ইউক্রেনিয়ান উইঙ্গার ভিক্টর টিসিগানকোভের বাড়ানো বলে জাতীয় দলের সতীর্থ ডোভিক গোল করে জিরোনাকে এগিয়ে দেন। যদিও খুব দ্রুতই সমতায় ফিরে বার্সেলোনা। রাফিনহার কর্ণার থেকে ১৯ মিনিটে ৩৫ বছর বয়সী পোলিশ তারকা লিওয়ানদোস্কি গোল করে বার্সাকে সমতায় ফেরান। তিন ম্যাচ পর প্রথম গোল আদায় করে নিলেন লেভা।
রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক লেফট-ব্যাক গুটিরেজ বিরতির পাঁচ মিনিট আগে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়িয়ে আবারো জিরোনাকে এগিয়ে দেন। বার্সেলোনা ম্যাচে ফিরে আসার জন্য সব চেষ্টাই করেছে। ফ্রেংকি ডি জংয়ের লো শট সহজেই রুখে দেন জিরোনা গোলরক্ষক পাওলো গাজানিগা। রাফিনহার ফ্রি-কিক বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে ভালেরি বার্সেলোনার সব আশা শেষ করে দেন। স্টুয়ানির সহায়তায় তিনি গোল করে জিরোনাকে ৩-১ গোলের লিড উপহার দেন। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে গুনডোগান গোল করে বার্সাকে লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। লিওয়ানদোস্কি সুযোগও পেয়েছিলেন, কিন্তু তার হেড ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। একেবারে শেষ মুহূর্তে স্টুয়ানি জিরোনাকে বড় জয় উপহার দেন। ম্যাচ শেষে অনেক খেলোয়াড়ই দৌঁড়ে সমর্থকদের সামনে গিয়ে স্মরণীয় জয় উদযাপন করেছেন। মাইকেল বলেছেন এই জয় তার দলের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শুরুতে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও এখন শিরোপা জয়ে সত্যিকার অর্থেই তাদেরকে অন্যতম বড় একটি প্রতিপক্ষ হিসেবে চিন্তা শুরু করেছে ফেবারিটরা।
এর আগে দিনের শুরুতে দিয়েগো সিমিওনের এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ আলভারো মোরাতা ও এ্যাঞ্জেল কোরেয়ার গোলে আলমেরিয়ার বিপক্ষে ২২ মিনিটেই ২-০ ব্যবধানে লিড নেয়। মেট্রোপলিটানোতে লিও ব্যাপটিস্টার ৬২ মিনিটে গোল করে আলমেরিয়ার হয়ে আশা জাগিয়ে তুলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু আর হয়নি, ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিক এ্যাথলেটিকো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৪:১৮ ৩৮ বার পঠিত