বিএনপির শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মানবাধিকার নিয়ে বিএনপি বড় বড় কথা বলছে। অথচ তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় এমনও ঘটেছে যে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর রায় হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতর (পিআইডি) সম্মেলন কক্ষে বরেণ্য রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আহমেদ ফিরোজ গ্রন্থিত ‘সোহরাওয়ার্দী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও মতবিনিময়কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিএনপি মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে। আওয়ামী লীগও সমাবেশ করব। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ১০ ডিসেম্বর হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিচার বন্ধ করার মধ্য দিয়ে। দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করা হয়েছিল। সেটি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়েই হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে ১৯৭৭ সালে নির্বিচারে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে।
বিচার ছাড়া হত্যাকাণ্ড। এমনও ঘটনা ঘটেছে, অভিযুক্ত না হয়েও নামের মিল থাকায় আরেক ব্যক্তিকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। সেই ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করে বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তি না।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! উপরের নির্দেশে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে, ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আর রায় হয়েছে পরে। দিজ আর ডকুমেন্টেড (এগুলো নথিভুক্ত)। জিয়াউর রহমানের এডিসি হিসেবে যিনি কাজ করতেন, তিনি নিজে বলেছেন, জিয়াউর রহমান যখন সকালের নাশতা করতেন, তখন তিনি এই ফাইলগুলো নিয়ে যেতেন এবং জিয়াউর রহমান নাশতা করতে করতে সেগুলোতে সই করতেন। এমন ঘটনাও আছে, জিয়াউর রহমান বিদেশ যাচ্ছেন, প্লেনে ওঠার সিঁড়িতে ওঠার আগে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করতেন।
এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এরপর ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যেভাবে নির্বিচারে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, রাজনীতির নামে এ ধরনের ঘটনা সমসাময়িক বিশ্বের কোথাও ঘটেনি। এগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন। ২০০৪ সালে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী ও দুজন অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০০ জন। সেই হামলার পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে গাঁজাখোরি রিপোর্ট, আর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তার সংসদ সদস্যদের হাস্যরস–এগুলো সব মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, আজ যে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, ড্রাইভার পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, চোরাগোপ্তা হামলা করা হচ্ছে, এগুলো কী মানুষের অধিকার লঙ্ঘন নয়? সুতরাং তাদেরকে নিয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এবং যারা মানবাধিকারের ধুয়া তুলে বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায়, আর ফিলিস্তিনে যখন নারী-শিশুদের পাখি শিকারের মতো হত্যা করা হয়, গাজায় হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়ে একসঙ্গে ৫০০ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং সাধারণ মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, তাদের কর্ণকুহরে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশে যারা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়েছে, তাদের নিয়ে সমাবেশ করব।
বিএনপি কী করবে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, আগে মানুষ হত্যা করছে, যাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দল প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা নিজেরাই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী।
বিএনপি এখন পর্যন্ত জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্য দিয়ে আসছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কর্মসূচি বলতে চোরাগোপ্তা হামলা করে গাড়ি পোড়ানো, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করা। তারা তাদের সন্ত্রাসীদের নামিয়েছে, যারা নেশাখোর তাদের দিয়েও হামলা পরিচালনা করছে।’
অনেক ক্ষেত্রে দিনমজুরকে বলছে, আপনি সারা দিন দিনমজুরি করে কত পাচ্ছেন, তারা বলে আটশ বা এক হাজার টাকা। তাদের দুই হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলছে, এটা মেরে আসো। এমনও করছে। এগুলো দুষ্কৃতকারীদের কাজ। বিএনপি-জামায়াত এখন দুষ্কৃতকারী। আমরা দুষ্কৃতকারীদের দমন করার লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪১:০৬ ৭৫ বার পঠিত #নির্বাচন ২০২৪