উত্তেজনাকর ম্যাচে নাপোলিকে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত করে সি-গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে পৌঁছে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এই পরাজয়ে সিরি-এ চ্যাম্পিয়ন নাপোলিকে আপাতত টেবিলের দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শেষ ম্যাচে স্পোর্টিং ব্রাগার বিপক্ষে ফলাফলের উপর নির্ভর করছে দ্বিতীয় দল হিসেবে এই গ্রুপ থেকে কারা পরের রাউন্ডে যাবে।
রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন মাদ্রিদ গ্রুপে শতভাগ জয় নিয়ে আগেই নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছিল। সফরকারী নাপোলির বিপক্ষে ম্যাচটির মাধ্যমে গ্রুপের শীর্ষ দল নির্ধারিত হয়েছে। গিওভান্নি সিমিওনের গোলে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল নাপোলি। রডরিগো ও জুড বেলিংহাম দ্রুত দুই গোল করে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেন। আন্দ্রে-ফ্র্যাংক জাম্বো অনগুইসা বিরতির ঠিক পরে নাপোলির হয়ে সমতা ফেরান। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি ছিল। তরুণ নিকোলাস পাজ ৮৪ মিনিটে মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত করেন। স্টপেজ টাইমে জোসেলু জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছেন।
পাঁচ ম্যাচে এনিয়ে পাঁচটিতেই জয়ী হলো মাদ্রিদ। ম্যাচ শেষে ১৯ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার পাজ বলেছেন, ‘আমি সত্যিই দারুন খুশী, এটা স্বপ্ন সত্যি হবার মত ঘটনা। আমি কোনভাবেই এই মুহূর্তটিকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার সতীর্থরা হয়তো আমার থেকেও আরো বেশী খুশী হয়েছে। তাদের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।’
ওয়াল্টার মাজ্জারির অধীনে নাপোলি অনেকটাই নতুন চেহারায় মাঠে খেলতে নেমেছিল। এ্যাথলেটিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনের ছেলে গিওভান্নি সিমিওনে ছিলেন আক্রমনভাগের নেতৃত্বে। ম্যাচের শুরুতেই দলকে এগিয়ে দিয়ে গিওভান্নি নিজেকে প্রমান করেছেন। ৯ মিনিটে গিওভান্নি ডি লোরেঞ্জোর কাট-ব্যাকে আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড মাদ্রিদ গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনকে পরাস্ত করেন। যদিও লুনিন গোল বাঁচানোর সর্বাত্মক চেস্টা করেছে। কিন্তু বল লাইন ক্রস করায় গোল পায় নাপোলি। গোল পরিশোধে খুব বেশী সময় নেয়নি মাদ্রিদ। ব্রাহিম দিয়াজের সহায়তায় রডরিগো কোনাকুনি শটে মাদ্রিদের পক্ষে সমতা ফেরান। গত সপ্তাহে কাডিজের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় গত ছয় ম্যাচে এনিয়ে চার গোল করলেন রডরিগো। ইনজুরিতে থাকা ভিনিসিয়াস জুনিয়রের অনুপস্থিতিতে তার জাতীয় দলের সতীর্থ রডরিগো দারুনভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
২২ মিনিটে ডেভিড আলাবার নিখুঁত ক্রসে বেলিংহাম নাপোলি গোলরক্ষক এ্যালেক্স মেরেতকে পরাস্ত করলে এগিয়ে যায় মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চার ম্যাচে এনিয়ে বেলিংহাম চার গোল করলেন, এবারের মৌসুমে সব মিলিয়ে ১৬ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। ক্লাবের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় জায়গা করে নেবার দৌঁড়ে দারুনভাবে এগিয়ে চলেছেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
ম্যাচ শেষে মাদ্রিদ বস কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এই ধরনের ফুটবলে বেলিংহাম যে এত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবেন তা কল্পনায় ছিলনা। নতুন ক্লাবে সে আমাদের জন্য বিস্ময় উপহার দিয়েছে। বক্সের ভিতর সে হঠাৎ করেই আবির্ভূত হয়, এমন ভাবে সে নিজেকে উপস্থাপন করে যেন কোন মোটরবাইক হঠাৎ করেই এসে উপস্থিত হয়েছে।’
মাদ্রিদের হয়ে তৃতীয় গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন দিয়াজ। কিন্তু তার শটটি পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। এসময় তিনি বেলিংহাম কিংবা রডরিগোর দিকে বল বাড়িয়ে দিতে পারতেন। বিরতির আগে বেলিংহাম গোঁড়ালিতে কিছুটা আঘাত পেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আবারো তাকে মাঠে স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে দেখা গেছে।
নাপোলি অবশ্য বিরতির পরপরই সমতায় ফিরে। ৪৭ মিনিটে জাম্বো অনগুইসাকে আটকানো সম্ভব হয়নি লুনিনের। এই গোলের পর নাপোলিকে আর শেষ পর্যন্ত তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। জোসেলু ও রডরিগো আনচেলত্তির দলকে আরো এগিয়ে দেবার দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। মেরেত দারুনভাবে বেলিংহামকে রুখে দেন। এরপর এন্টোনি রুডিগারের হেড সেভ করে নাপোলিকে রক্ষা করেন মেরেত। বদলী খেলোয়াড় ভিক্টর ওশিমেনের একটি গোল অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে গেলে নাপোলির এগিয়ে যাওয়া হয়নি। দুর পাল্লার শটে বদলী খেলোয়াড় পাজ যখন মাদ্রিদকে তৃতীয় গোল উপহার দেন তখন সান্তিয়াগোতে ভিন্ন এক আবহ তৈরী হয়। ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারকে ইতোমধ্যেই অনেকে ভবিষ্যতের তারকার তকমা দিয়ে দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি নিজেকে দারুনভাবে প্রমান করেছেন।
আনচেলত্তি বলেন, ‘পাজ দারুন এক প্রতিভাবান খেলোয়াড়। যুব একাডেমী থেকেই সে আমাদের সাথে কাজ করছে। সে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক গোল দিয়েছে। এটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
বেশ কিছু ভাল সুযোগ হাতছাড়া করা জোসেলু শেষ পর্যন্ত স্টপেজ টাইমে পোস্টের খুব কাছে থেকে গোল করে স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৭:১৮ ৬১ বার পঠিত