বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’-তে রূপ নিয়েছে। দেশের খুলনা, চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে চলছে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। এ ছাড়া সারা দেশেই ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে বাড়ছে বৃষ্টি ও বাতাসের গতিবেগ। তাই জেনে নিন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ের এই সময়টায় কী করবেন আর কী করবেন না।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের সীমান্তে চলছে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত।
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাব বাড়তে শুরু করবে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মোংলা, বরিশাল, ভোলা ও চট্টগ্রাম উপকূলে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী এ পরিবেশে এখন উত্তাল সমুদ্র। এমন পরিস্থিতিতে সবার করণীয় কী তা কি জানেন?
ঘূর্ণিঝড়ের এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে তাই কী করবেন আর কী করবেন না–আসুন জেনে নিই আজকের আয়োজনে।
নিজ এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আগে করণীয়
১. ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেখে নিন বাড়ির কোনো টাইলস, দরজা বা জানালায় ত্রুটি রয়েছে কি না। ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত মেরামত করে নিন। তা নাহলে প্রবল ঝড়ে এগুলো ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২. অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। মরা বড় গাছ সরিয়ে ফেলুন। বাড়ির নর্দমা পরিষ্কার রাখুন। খোলা ইট, পাথর বাড়ির আশপাশ থেকে সরিয়ে ফেলুন।
৩. ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটতে পারে। তাই আগে থেকে হারিকেন বা চিমনিতে কেরোসিন ভরে রাখুন। হাতের কাছাকাছি রাখুন দিয়াশলাই। এ ছাড়াও হাতের কাছে রাখুন টর্চ ছাড়াও অন্য কেনো আলোর ব্যবস্থা।
৪. মোবাইল ফোনে চার্জ দিয়ে রাখতে ভুলবেন না। মোবাইলে চার্জ থাকলে প্রয়োজনের সময় আপনি অন্যের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন।
৫. আপডেট খবর সম্পর্কে অবগত থাকতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে থাকুন। আবহাওয়া দফতরের নতুন তথ্য জানুন। পাশাপাশি মেনে চলুন আবহাওয়াবিদদের পরামর্শ।
৬. ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাড়ির বাইরে থাকা একেবারেই নিরাপদ নয়। তাই প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করুন। হাতের কাছে রাখুন প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছে দিয়ে মোংলা ও পায়রা উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করতে পারে। ছবি: আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া
৭. গৃহপালিত পশু বাড়ির ভেতর নিরাপদে বা আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার চেষ্টা করুন।
৮. যদি আপনার বাড়ি নদীর আশপাশে হয় এবং বাড়ির অবস্থা খুব ভালো না থাকে, তাহলে কাছের কোনো স্কুল, বাড়ি বা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করুন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৯. ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাওয়ার সময় কী কী জরুরি জিনিস সঙ্গে নেয়া যাবে, সেই অনুসারে প্রস্তুতি নিন।
১০. আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত তৈরি করে নিন। জলোচ্ছ্বাসের আগে এই পাকা গর্তের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে সিমেন্ট দিয়ে তা বন্ধ করে দিন। যাতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় এসব অক্ষত থাকে।
১১. বিশুদ্ধ পানির অভাবে এ সময় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তাই সঙ্গে রাখুন খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ফিটকারি।
১২. বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি মজুত করে রাখুন। অতিরিক্ত পরিমাণ রান্না করা খাবার রাখবেন না। কারণ এসব খাবার দ্রুত পচে যাবে।
১৩. যদি ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাড়িতে ফিরতে না পারেন, তাহলে রাস্তায় অবস্থান করা একেবারেই নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান।
১৪. বাড়ির আশপাশে টিউবওয়েল বা পানির কল থাকলে এর মুখ পলিথিন দিয়ে ভালো করে বেঁধে রাখুন, যেন ময়লা বা দূষিত পানি পানির উৎসে প্রবেশ করতে না পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় মোটেও যা করবেন না
১. ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিরাপদ থাকতে কখনোই গুজবে কান দেবেন না।
২. বাড়ির বাইরে থাকবেন না। বাড়ির কোনো সদস্যকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হবেন না।
৩. কোথাও কোনো খোলা তার ঝুলতে দেখলে তাতে হাত দেবেন না। যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৪. ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। কেননা, পুনরায় আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই নিশ্চিত হতে এবং সঠিক তথ্য পেতে অপেক্ষা করুন।
৫. বৈরী পরিবশে কোনো অবস্থাতেই সমুদ্রবন্দরের আশেপাশে অবস্থান করবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৮:৫২ ৪৭ বার পঠিত