হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য নাম। আজ তার ৭৫ তম জন্মদিন। তিনি আশির দশকে মানুষকে নাটকমুখি করেছিলেন। বিনোদনের খোরাক যুগিয়েছেন। তুলে এনেছেন সমাজের নানা অসংগতি।
একদিকে সমাজের রুঢ় বাস্তবতা অন্যদিকে শক্তিশালী চরিত্র আর সংলাপ। আর এসবের সমন্বয়ে নির্মিত এক একটি নাটক যেমন আনন্দ-বিনোদনের খোরাক যুগিয়েছে তেমনি উঠে এসেছে সমাজের নানা অসঙ্গতি। সাহিত্য সমালোচকেরা তাকে মূলধারার লেখক বলে মানতে না চাইলেও নাট্যনির্মাতা হিসেবে তিনি যে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়া ছুঁয়েছিলেন সেটি অস্বীকারের কোনো উপায় নেই।
মানুষকে তিনি সহজ এক বোধে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। গল্পের পর গল্পের ফাঁদ পেতে এমন গভীরতর এক শূণ্যতায় ভরিয়ে রেখেছেন যে, বাংলা সাহিত্য পাঠকদের সাথে তৈরি হয়ে গেছে তার চিরকালীন এক সম্পর্ক। হুমায়নীয় ভঙ্গিতে- ছোটগল্প, নাটক, সংগীত ও উপন্যাসে তিনি একক এবং অনন্য হয়েই আছেন। বাঙালি মাত্রই তার সম্মোহনী শক্তিতে মুগ্ধ।
বিংশ শতাব্দীর বাঙালির জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার হুমায়ূন আহমেদ বাংলার শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখায় করেছেন বিচরণ, হয়েছেন সফলও! তাকে বলা হয়, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও তিনি বেশ সমাদৃত। পৃথীবির বুকে নানা আন্দোলন-নানা সংগ্রামের গল্প অনেকেরই জানা। তবে কোনো নাটকের চরিত্র বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলনের ইতিহাস হয়তো পৃথিবীর বুকে একটিই। বিখ্যাত সেই চরিত্রের নাম ‘বাকের ভাই’। নাটক- ‘কোথাও কেউ নেই’। নাটকে বদির মিথ্যা সাক্ষীর বলি হন বাকের ভাই।
হন ফাঁসির আসামি অথচ তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আর তাই তাকে বাঁচানোর দাবিতে রাজপথে নামে সাধারণ মানুষ। চরিত্র কতোটা জীবন্ত হলে, মানুষ চরিত্রে কতোটা ঢুকে গেলে, নায়কের মৃত্যুতে শোকাহত হন, আপ্লুত হন! তাই-ই দেখিয়েছেন হুমায়ূন। একটা সময় শাসকগোষ্ঠীর চাপে রাজাকার শব্দটি উচ্চারণ করা যেত না। ঠিক তখন ময়নার মুখে হুমায়ূন সংলাপ তুলে দিলেন “তুই রাজাকার”। যা একটা সময় রূপ নেয় জনপ্রিয় স্লোগানে।
দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের। এভাবেই হুমায়ুন খুব সরল আর সাবলিল গল্পের মাধ্যমে তুলে আনতেন সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি। সেই গল্পে উঠে আসতো মধ্যবিত্তের সমাজ ব্যবস্থা, চিন্তাভাবনা। চরিত্র সংলাপ আর পোশাকেও ছিল তা বিদ্যমান।
ভবঘুরে হিমু কিংবা জীবনের জটিলতা ও রহস্য উন্মোচনকারী মিসির আলি আমাদের সমাজেরই বাস্তবানুগ প্রতিনিধি। আমাদেরই পরিবারভুক্ত চেনা চরিত্র। যদিও তার চরিত্র, সংলাপ রচনার মধ্যে আপাত অদ্ভূত এবং উদ্ভট বলে অনেক সময় প্রতিভাত হয়। এর পেছনে আছে ব্যক্তিচৈতন্যের মনোজাগতিক চিরায়ত রহস্য। আছে অ্যাবসার্ড ভাবনা।
হুমায়ূন বিনোদনের ছলে তুলে ধরেছেন সমাজের আসল রূপ। তুলে ধরেছেন মধ্যবিত্ত বাঙালির যাপিত জীবনের তাবৎ সংকট। তবে জীবনকে সহজ এবং ইতিবাচক করে দেখার বিশিষ্টতা ছিল তার। তাই দর্শকের মনেও দাগ কাটতো গভীরভাবে।
দেশি লেখকের বইয়ের পাঠক সৃষ্টিতেও যেমন ঠিক তেমনি টেলিভিশনে মানুষকে নাটকমুখি করার ক্ষেত্রেও হুমায়ূন আহমেদের তুলনা তিনি নিজেই।
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আমি সেই লেখককে বড় লেখক মনে করি যিনি মৃত্যুর পরও সমান জনপ্রিয় থাকে। অথবা তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। সেই প্রেক্ষিতে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। তিনি অসংখ্য চমৎকার চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে তরুণদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হিমু চরিত্রটি।
তিনি আরও বলেন, তার চলচ্চিত্র মানুষ কখনও ভুলবে না। তাছাড়া তার নাটকগুলো নাট্যপ্রেমী মানুষের কাছে আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। সবকিছু মিলিয়ে তিনি একজন অমর সাহিত্যিক, অমর লেখক।
বিংশ শতাব্দীর বাঙালির জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার হুমায়ূন আহমেদ বাংলার শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখায় করেছেন বিচরণ। হয়েছেন সফলও! তাকে বলা হয়, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও তিনি বেশ সমাদৃত।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৬:৪১ ৫৬ বার পঠিত