নামাজ প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরজ। নামাজ ছাড়া ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি সম্ভব নয়। নামাজ পাপাচার থেকে মুক্ত রাখে। নামাজ আদায়ে স্বচ্ছ, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন লাভ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা: আনকাবুত ৪৫)
প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শুধু তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফর করা যাবে-আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী), মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা। (মুসলিম) এ তিন মসজিদে নামাজ আদায়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সওয়াব।
মসজিদুল হারাম
হযরত জাবির রা. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাসজিদুল হারাম ছাড়া অপরাপর মসজিদের নামাজ অপেক্ষা আমার মসজিদের নামাজ হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ (ফজিলতপূর্ণ)। আর অন্যান্য মসজিদের নামাজের তুলনায় মাসজিদুল হারামের নামাজ এক লাখ গুণ বেশি সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ ১৪০৬, মুসনাদে আহমাদ ১৪২৮৪, ১৪৮৪৭)
হযরত নুহ আ.-এর মহাপ্লাবনের পর সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহিম আ. সপরিবারে মক্কায় এসেছিলেন। তখন থেকেই মক্কায় মানব বসতির সূচনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৭৭ মিটার উচ্চতায় পবিত্র মক্কানগরী। আয়তন প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার। বসবাসযোগ্য ৮৮ বর্গকিলোমিটার, বাকি এলাকা পাহাড়-পর্বত, মরুপ্রান্তর। ৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মসজিদে হারাম পবিত্র মক্কার প্রাণকেন্দ্র।
মক্কার নাম
মক্কার বেশ কিছু নাম আছে। মক্কাকে বলা হয়, মসজিদুল হারাম, বাক্কা, উম্মুল কুরা, বায়তুল আতিক, মায়াদ, আল বালাদ, আল বালাদুল আমিন, করিয়া, ওদি, তিহামা ইত্যাদি।
মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে পড়া নামাজের তুলনায় আমার এ মসজিদে পড়া নামাজ হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ।’ (বুখারি ১১৯০, মুসলিম ১৩৯১-৪, তিরমিজি ৩২৫)
মসজিদে আকসায় নামাজ পড়ার ফজিলত
হযরত আবু দারদা রা. আনহু বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদুল হারামে একটি নামাজ একলাখ নামাজের সমতুল্য এবং আমার মসজিদে একটি নামাজ এক হাজার নামাজের সমতুল্য এবং মসজিদুল আকসায় একটি নামাজ পাঁচশত নামাজের সমতুল্য। (ইবনে খুজাইমা ২৬৮)
হাদিসের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় জীবনের সব গুনাহ মাফের মাধ্যম।’ (ইবনু মাজাহ ১৪০৮, আত-তারগিব ১৭৭৮)
মসজিদে কোবায় নামাজ পড়ার ফজিলত
হযরত সাহল ইবনু হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করলো অর্থাৎ অজু করলো, এরপর মসজিদে কোবায় এসে নামাজ আদায় করলো, তার জন্য একটি ওমরাহর সমান সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনু মাজাহ ১৪১২, নাসাঈ ৬৯৯)
যে নামাজির সাওয়াব বেশি
নামাজ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, সুস্থ্য জ্ঞানের অধিকারী নারী-পুরুষের উপর ফরজ। কিন্তু এ নামাজ আদায়ে একাগ্রতা, একনিষ্ঠতার গুরুত্ব অত্যধিক। যার ফলে একই নামাজের সওয়াব ক্ষেত্রে বিশেষ কম-বেশির ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পুরুষদের পক্ষে জামায়াতে নামাজ আদায় করার সওয়াব তার ঘরে ও বাজারে নামাজ পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি। এই কারণে যে, কোনো ব্যক্তি যখন খুব ভালভাবে অজু করে নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে এবং নামাজ ছাড়া তার মনে আর কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, তখন মসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গোনাহও মাফ হয়ে যায়। মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাজের অনুরূপ ছাওয়াবই পেতে থাকে।’
আর যে ব্যক্তি নামাজ আদায়ের পর কাউকে কষ্ট না দিয়ে অজুসহ মসজিদে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার মার্জনার (ক্ষমার) জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকে, ‘হে আল্লাহ! একে তুমি ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! এর তাওবা কবুল কর হে আল্লাহ! এর প্রতি তুমি দয়া প্রদর্শন কর। (বুখারি ও মুসলিম)
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৩:০৬ ৮৭ বার পঠিত