দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানি এক্সিলারেট গ্যাস মার্কেটিং লিমিটেড পার্টনারশিপ থেকে বছরে ১০ লাখ টন এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করবে সরকার। আগামী ২০৪০ সাল পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিটি এলএনজি সরবরাহ করবে।
আজ বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জীর মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। ১৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ ও ২০২৭ সালে বছরে ৮.৫ লাখ টন এবং পরবর্তীতে ১০ লাখ টন করে এলএনজি সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে।
অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, দেশে চলমান নানা যে সংকট চলছে তা বৈশ্বিক কারণে। এর জন্য বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়। অন্যান্য দেশের দায় বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। বৈশিক পরিস্থিতির কারণে আমাদেরকে ১৪ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের এই ধারা ব্যাহত করতে রাজনৈতিক সহিংসতা চালানো হচ্ছে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের এই সহিংসতা প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীসহ ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান তিনি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের ৬০ শতাংশই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের। এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছে। তারা এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ করছে। নিরবচ্ছিন্ন ও সহজলভ্য জ্বালানির যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই চুক্তি অবদান রাখবে।যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরন দেশীয় গ্যাসের ৬৪ শতাংশই সরবরাহ করছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে। যা বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্যে দ্বিতীয়। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সেটা আমরা এগিয়ে নিতে চাই। এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এলএনজির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিটি ১৫ বছর বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
এক্সিলারেট এনার্জি প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন কোবোস তার ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল এলএনজি বাজারগুলির মধ্যে একটি, এবং দেশটি এলএনজি আমদানি শুরু করার পর থেকে এক্সেলরেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমরা পেট্রোবাংলার সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে দেশের দ্রুত বর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য আগ্রহী।
অনুষ্টানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জ্বালানি সচিব মো: নুরুল আলম, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার প্রমুখ।
পেট্রোবাংলার সচিব রুচিরা ইসলাম এবং এক্সিলারেটর এনার্জির ভাইস-প্রেসিডেন্ট রেমন্ড ওয়াং ডি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে এক্সিলারেট এনার্জি এবং পেট্রোবাংলার মধ্যে তিনটি চুক্তি সই অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি ক্রয় এবং বিক্রি চুক্তি (এসপিএ), মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পায়রা বন্দর এলাকায় আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ বিষয়ে টার্ম শীট চুক্তি সই হয়।
মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে পেট্রোবাংলার সঙ্গে এক্সিলারেট এনার্জি চুক্তি করেছিল ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। বর্তমানে বাংলাদেশে মার্কিন কোম্পানিটির ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দুটি ভাসমান টার্মিনাল দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের প্রায় ২৫% সরবরাহ করে থাকে। নতুন চুক্তির ফলে দৈনিক আরও ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪০:৫৫ ৭৬ বার পঠিত