হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবারও করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়েছিলো।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সেখানে নেয়া বলে জানান চিকিৎসক। তবে মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে জানা যায়, অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে আবার কেবিনে স্থানন্তর করা হয়েছে।
বেগম জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগেও কয়েকবার তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়।
গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সম্প্রতি তার চিকিৎসকরা প্রেস কনফারেন্সে জানান, তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন। লিভারের অবস্থা ভালো না থাকায় তার শরীরের ওষুধ কাজ করছে না বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে তার এখন যে চিকিৎসা দরকার তা দেশে সম্ভব নয় বলেও দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।
গত ১০ এবং ১৪ অক্টোবর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়েছিলো। পরে অবস্থার উন্নতি হলে আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা ও লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদ্যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
সবশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি এ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সপ্তমবার বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এর আগেই তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অষ্টমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়। মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শর্ত দুটি হলো: খালেদা জিয়া আগের মতোই ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
দুটি মামলায় সাজা হওয়ায় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত থাকায় তিনি কারামুক্ত রয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার সাজা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন একই আদালত।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৩:২৬ ৩৭ বার পঠিত