আগামী ১২-১৪ অক্টোবর রাজধানীতে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার এবং লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো, ব্লিস-২০২৩-এর তিন দিনব্যাপী ৪র্থ সংস্করণ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকরা এতে তাদের পণ্য প্রদর্শন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ অক্টোবর বিকাল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ব্লিস-২০২৩-এর চতুর্থ সংস্করণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তবে এর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) যৌথভাবে এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ব্লিস-এর শেষ তিনটি সংস্করণ ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
ব্লিস-২০২৩ ক্রেতা, ব্র্যান্ড এবং সোর্সিং প্রতিনিধিদের চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট শিল্পের শীর্ষ-স্তরের প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারকদের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে এবং বর্তমান বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কার্যকর নেটওয়ার্কিং, ব্যবসায়িক উন্নয়নের সুবিধা প্রদান করবে।
ব্লিস-২০২৩ এর থিম হল: ‘সম্ভব, বাংলাদেশে’। ব্লিস-২০২৩-এর মূল লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকার মূল্য চেইনে বাংলাদেশকে একটি সুসংহত, নির্ভরযোগ্য ও রিসোর্সফুল সোর্সিং সলিউশন হিসেবে ব্র্যান্ডং এবং স্থান দখল করা।
এলএফএমইএবি’র সভাপতি ও বিএলএলআইএসএস ওয়ার্কিং কমিটি ২০২৩-এর আহ্বায়ক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর নগরীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এলএফএমইএবি’র উপদেষ্ট ও এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, এলএফএমইএ’র ডিরেক্টর ও শিন চ্যাং শুজ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস হোও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান ও এলএফএমইএবি’র নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানিসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ যদি সব খাতে অগ্রসর হয়, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো সম্ভব হবে। টিপু মুনশি বলেন, যেহেতু চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাত ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায়, তাই পণ্যের যথাযথ গুণমান এবং বৈচিত্র্য বজায় রাখার মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে স্থানীয় প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের চামড়াজাত পণ্য বিশ্বমানের। এখন আমাদের ব্যাপকভাবে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করতে হবে, যার জন্য এই খাতের প্রচারেরও প্রয়োজন আছে। সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, এমন চারটি খাতের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা একটি বিষয় উল্লেখ করে টিপু বলেন, উদ্যোক্তাদের এখন তাদের পণ্য আরও বিচক্ষণভাবে তুলে ধরতে হবে। তিনি এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আরএমজি সেক্টরের মতো চামড়াজাত পণ্য ও জুতাও দেশের জন্য গর্বের একটি খাত। তিনি জানান যে এই প্রদর্শণীতে শতাধিক বিদেশি ক্রেতা এবং বিশ্ব ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি, প্রায় ৪৬ জন নেতৃস্থানীয় প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক তাদের স্বল্পমূল্যের এবং উচ্চ মূল্যের পণ্য প্রদর্শন করবে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, এই ব্লিস-এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরতে সফল হব।’ নাসিম বলেন, শো ছাড়াও সাইডলাইনে ৩টি ডেডিকেটেড ব্রেকআউট সেশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ২ শতাধিক শিল্প নেতা, নীতিনির্ধারক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিদেশি অতিথিরা অংশ নেবেন।
এলএফএমইএবি-এর উপদেষ্টা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বৈচিত্র্যময় পণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা এই ব্লিসকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় প্রায় ৯৮ শতাংশ কারখানা এখন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উল্লেখ করে সাইফুল বলেন, ‘দেশের প্রায় ৮৪% রপ্তানি আয়ের প্রতিনিধিত্বশীল আরএমজি খাত ছাড়াও আমরা চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা খাতকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি, যাতে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে তাদের পণ্য কেনে।
চীনা বিনিয়োগকারী ও শিন চ্যাং জুতা (বিডি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস হো বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে চারটি কারখানায় ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি। পঞ্চম কারখানায় বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের জুতা বাংলাদেশের সেরা দূত, যা বিশ্বকে দেখিয়েছে- এটি সম্ভব।’ তিনি বলেন, স্থানীয় চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প শুধু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে না, এটি দারিদ্র্য হ্রাস করবে এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটাবে।
শো থেকে স্পট অর্ডারের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসিম বলেন, স্পট অর্ডারের বাইরেও তারা এই শো’য়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া আমরা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের ওপরও জোর দিচ্ছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাভার ট্যানারি এস্টেটের সিইপিটি শিগগিরই চালু হবে বলে তারা খুব আশাবাদী। পাদুকা খাত বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসিম বলেন, শুল্ক প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পাশাপাশি লিড টাইম আরও কমাতে হবে এবং ব্যবসা সহজ করাকে নিশ্চিত করতে হবে।
আশা করা হচ্ছে- ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি, ক্রেতা, পরিবেশক, সোর্সিং এজেন্ট, ডিজাইনার ও শিল্প বিশেষজ্ঞরা শো দেখতে আসবেন। এছাড়া সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী, আনুষঙ্গিক সেবা প্রদানকারী ও সরকারি সংস্থাও এতে উপস্থিত থাকবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, ভারত, যুক্তরাজ্য, জাপান, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও চীনসহ ১৫ টি দেশের ২ শতাধিক অংশগ্রহণকারীর এই শো’টি দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৯:৫২ ৫৭ বার পঠিত