হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার মাশাহিরো ওকামুরা।
শনিবার (৭ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দুই দেশের পতাকার মতোই জাপান ও বাংলাদেশের কূটনীতিক সম্পর্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারত্বে রূপ দিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। এরই অংশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সহযোগিতা এবং সম্ভাব্য অংশীদারত্ব চুক্তির জন্য যৌথ গবেষণা চলছে।
ভাইস মিনিস্টার আরও বলেন, বাংলাদেশ-জাপানের সম্পর্কের কথা বলতে গেলে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি উঠে আসে। গত ৫০ বছর ধরে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। সর্বশেষ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং এ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে জাপান।
এ দুটি প্রকল্প বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হতে এবং আরও বেশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
জানা গেছে, পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এস্কেলেটর।
নতুন এ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগের জন্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো অত্যাধুনিক তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া করা হয়েছে। রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং অড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ। যাত্রীদের স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের ১৬টি রেগুলার ব্যাগেজ বেল্ট থাকবে টার্মিনালটিতে। অতিরিক্ত ওজনের (অড সাইজ) ব্যাগেজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আরও চারটি পৃথক বেল্ট।
অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন)। এগুলোতে নিজের পাসপোর্ট এবং টিকিটের তথ্য প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে বোর্ডিং পাস ও সিট নম্বর। এরপর নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী তার লাগেজ রেখে দেবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজগুলো এয়ারক্রাফটের নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। তবে নির্ধারিত ৩০ কেজির বেশি ওজনের ব্যাগেজ নিয়ে এখানে চেক-ইন করা যাবে না। সেসব যাত্রীদের জন্য আরও ১০০টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে এ টার্মিনালে।
টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৪:০২ ৪০ বার পঠিত